প্রথম নিশ্চিত আক্রান্তের মত সর্বত্র ঘুরে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার নজির দ্বিতীয় বালিগঞ্জের তরুণেরও

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২০ মার্চ: প্রথম জনের মা আমলা হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে করোনা সতর্কতাবিধি ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। এবার নিশ্চিত হওয়া আরেক করোনা আক্রান্ত, বালিগঞ্জের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী পুত্রের বিরুদ্ধে উঠল আরও মারাত্মক অভিযোগ। বিমানবন্দরেই তাঁকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনও পরোয়া না করে চায়ের দোকান, বন্ধুদের আড্ডা থেকে শুরু করে সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছেন। তারুণ্যের বার বার এই বেপরোয়া মনোভাব যে সমগ্র সমাজকে বিপদে ফেলছে, সেটা কিন্তু দাবি করছেন সকলেই।

অভিযোগ, ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে প্রথমে দিল্লি বিমানবন্দরে আসেন ওই তরুণ। সেখানেই তার সঙ্গে আরও ২ বন্ধু চলে যান পাঞ্জাব এবং ছত্তিশগড়ে। পরে তাঁদের দু’জনেরও মেলে করোনা পজিটিভ। এদিকে দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে ওই তরুণ আসতেই তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, বাড়ির ভিতর সম্পূর্ণভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে। কিন্তু ওই যুবক তা কোনওরকম পাত্তা না দিয়ে একাধিক জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে।

অভিযোগ, আবাসনে যেদিন ফিরে আসেন, সেদিন আবাসনের ভিতর ঘুরে বেরান। আবাসনের গেটের উল্টোদিকে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। একাধিকবার সেই চায়ের দোকানে আড্ডা দেন লেক রোডের বাসিন্দা ওই তরুণ। কালীঘাট এলাকায়, ২ নম্বর ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে দোকানেও ২ দিন যান করোনা আক্রান্ত তরুণ। ১৪০ নম্বর এসপি মুখার্জি রোডে পারিবারিক দোকান বা ব্যবসার জায়গাতেও গিয়েছেন ওই যুবক। এই দুটি দোকানই তাঁর বাবার, বাথরুম ফিটিংসের দোকান। সেখানে প্রত্যেক দোকানে রয়েছেন ৫-৬ জন কর্মী। এছাড়াও দোকানে অসংখ্য ক্রেতার সংস্পর্শেও এসেছেন ওই যুবক। এমনকি তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন আবাসনের একাধিক বাসিন্দা। ওই যুবক পরে বাইরের শপিং মল, রেস্তরাঁতেও গিয়েছেন।

সূত্রের খবর, গত ২-৩ দিন ধরেই সর্দি-কাশির উপসর্গ দেখা দিয়েছিল ওই তরুণের শরীরে। কিন্তু তার পরেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাননি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দারা কালীঘাট থানার পুলিশের নজরে বিষয়টি আনলে, পুলিশের তরফে খবর দেওয়া হয় স্বাস্থ্য দফতরকে। এর পর স্বাস্থ্য দফতর যোগাযোগ করে পরিবারের সঙ্গে। তার পরই উপসর্গ দেখে তাঁকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় করোনা পজিটিভ। ওই যুবকের বাবাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “কে বলেছে আমার ছেলে বাইরে বেরিয়েছে? প্রমাণ দিতে পারবেন? আপনারাই বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।”

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ওই যুবক কলকাতায় আসার আগে কোথায় কোথায় ঘুরেছেন এবং আসার পর কোথায় কোথায় গিয়েছেন, আমরা এখনও তার স্পষ্ট তথ্য পাইনি। এই ক’দিনে কার কার সংস্পর্শে তাঁরা এসেছেন, তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। প্রাথমিক ভাবে পরিবারের সদস্যদের আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বয়সের কারণে তাঁর ঠাকুরদা এবং ঠাকুরমাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *