Shalboni, Old women, মহাকুম্ভে গিয়ে প্রাণ গেল উর্মিলা ভুঁইঞার, শোকের ছায়া তার শালবনীর বাড়িতে

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জানুয়ারি: “সবাই বলছেন এরকম এক পবিত্র স্থানে বা তীর্থস্থানে গিয়ে মৃত্যু খুব পুণ্যের! কিন্তু, আমাদের তো মাথার উপর থেকে ছাদটা চলে গেল। এই বয়সেও সংসারের সবকিছু উনিই সামলাতেন। সংসারের খুঁটি ছিলেন উনি। আমরা সব কিছু মা (শাশুড়ি মা)-কে জিজ্ঞেস করেই করতাম। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে, জিজ্ঞেস করতাম। উনি বুঝিয়ে দিতেন। কিন্তু, কোনদিন বকাঝকা করতেন না। ভাবতেও পারিনি, পুণ্য করতে গিয়ে আর ফিরতে পারবেন না!” চোখে জল অম্বিকার। শাশুড়িকে হারিয়ে হাহাকার করছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর গোদাপিয়াশাল সংলগ্ন কাছারিরোডের (গুড়াইপাটনার) ভুঁইঞা পরিবারের একমাত্র গৃহবধূ।

সোমবার ভোরে দুই মেয়ে, দুই জামাই সহ আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে খড়্গপুর স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন শালবনীর ধর্মপ্রাণ বৃদ্ধা উর্মিলা ভুঁইঞা (৭৫)। মঙ্গলবার সাত সকালেই ট্রেন থেকে নেমে প্রয়াগরাজ স্টেশন থেকে পায়ে হেঁটে মহাকুম্ভে পৌঁছেও গিয়েছিলেন বিকেল নাগাদ। আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রমে। তারপরই বহু বছরের লালিত স্বপ্ন সফল করতে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব (পুণ্যস্নান) দিতে কাকভোরে বেরিয়ে পড়েছিলেন মেয়ে-জামাইদের সাথে। আর তারপরই ঘটে যায় বিপর্যয়! সব ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। বুধবার ভোর ৩টে থেকে নিখোঁজ হয়ে যান বৃদ্ধা উর্মিলা দেবী। দুপুর নাগাদ দেহ সনাক্ত করা হয় প্রয়াগরাজের মতিলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজের মর্গে।

প্রসঙ্গত, পূণ্যলাভের উদ্দেশ্যে দুই মেয়ে আর দুই জামাইয়ের সঙ্গে সোমবার প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন শালবনীর কাছারিরোডের বৃদ্ধা উর্মিলা ভুঁইঞা। ১৪৪ বছর পর বিরল যোগে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলায় পৌঁছেও গিয়েছিলেন। তবে, পুণ্যস্নান আর করা হয়নি। পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে বুধবার ভোরে প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় বৃদ্ধা উর্মিলা দেবীর। বুধবার দুপুরেই শোক সংবাদ এসে পৌঁছায় পশ্চিম মেদিনীপুরের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার শালবনীর গোদাপিয়াশাল সংলগ্ন কাছারিরোডে তাঁর বাড়িতে ছেলে-বউমা জানান, ইতিমধ্যেই পুরী, গঙ্গাসাগর সহ দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান তথা তীর্থক্ষেত্র ভ্রমণ করে এসেছেন তিনি। শালবনী টাঁকশালে এক ঠিকাদারের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন তাঁর একমাত্র ছেলে দুলাল ভুঁইঞা। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বলেন, “মা তীর্থক্ষেত্রে বেড়াতে খুব ভালোবাসতেন। তিন-চার মাস আগে আমার ছোট জামাইবাবু (খড়্গপুরের কমল মাইতি) মহাকুম্ভে যাওয়ার কথা বলেন। মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল। দিদি-জামাইবাবুকে বললাম, ঠিক আছে তাহলে মায়ের টিকিট কেটে নাও। পুরী, গঙ্গাসাগর একাধিকবার গেছেন। ভাবতে পারিনি, মহাকুম্ভ থেকে আর ফিরতে পারবেন না।” মায়ের ছবি হাতে দুলাল বলেন, “অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম। কুড়ি বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। মা কখনও বুঝতে দেয়নি।”

বউমা অম্বিকা বলেন, “হয়তো ভিড়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। আর উঠতে পারলেন না। একটাই সাধ অপূর্ণ থেকে গেল। একবার বেলুড় মঠ যেতে চেয়েছিলেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *