আমাদের ভারত, ৩০ জানুয়ারি: না না, কোনো গ্রাম নয়, খাস কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজে সরস্বতী পুজো করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী যে কলেজকে নিজের কলেজ বলে দাবি করেন সেই যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজের সরস্বতী পুজো করতে বাধা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের হুমকি দিয়েছে তৃণমূলের ছাত্র নেতা সাব্বির আলি। ছাত্রদের খুন ও ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় বঙ্গ বিজেপি তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সরব হয়েছেন।
যোগেশ চন্দ্র কলেজের পড়ুয়াদের অভিযোগ, কলেজে ঢুকে তাদের সরস্বতী পুজোর না করার হুমকি দেয় তৃণমূলের দুষ্কৃতি সাব্বির আলি। পুজোর আয়োজন হলে ছাত্রদের খুনের হুমকি দেয়। সে বলে, আনোয়ার শা রোডে বের হলেই দেখে নেবে। মেয়েদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেবে। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় ঘটনা তীব্র নিন্দা করেছেন। সাব্বির- এর বিরুদ্ধে চারু মার্কেট থানায় এফ আই আর দায়ের করেছেন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।
এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশে এতদিন ধরে উগ্র ইসলামপন্থী মৌলবাদীদের তরফে যে ধরনের হুমকি চলছিল তা এখন আমাদের বাড়ির চারপাশে ঘটছে। রাস্তার নাম ‘আনোয়ার শাহ’ হওয়ায় এলাকায় সরস্বতী পূজার কোনো আয়োজন করা যাচ্ছে না! এখন, একটি ইসলামি মৌলবাদী দল দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী কলেজে প্রবেশ করেছে, ফতোয়া জারি করেছে এবং চলে গেছে। একটু ভেবে দেখুন- তুষ্টি-চালিত, অযোগ্য মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে তাদের কতটা সাহস? মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “সাবধান, চিন্তা করার জন্য একটু সময় নিন। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে এই ঘটনাগুলি প্রকাশ্যে ঘটছে, এবং তবুও তিনি কিছুই জানেন না!”
এই ঘটনার প্রতিবাদ করে বঙ্গ বিজেপির এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, বিখ্যাত যোগেশ চন্দ্র কলেজে সরস্বতী পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি নিজেকে এই কলেজের প্রাক্তনী বলে দাবি করেন, তিনি নীরব ছিলেন, যখন টিএমসি ছাত্র নেতা সাব্বির আলি এবং তার গোষ্ঠী প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিল যে, ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজো করা হলে মহিলাদের ধর্ষণ ও খুন করা হবে। “সরস্বতী পুজো হলে আনোয়ার শাহ রোড দিয়ে যাওয়ার সময় নারীদের হত্যা ও ধর্ষণ করা হবে!” – এই মর্মান্তিক হুমকি টিএমসি ছাত্র নেতা সাব্বির আলি জারি করেছে। চারু মার্কেট থানায় যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজের এক ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি তুষ্টির রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে না নেন এবং তার নিজের কলেজে হিন্দু ঐতিহ্য রক্ষার জন্য পদক্ষেপ না করেন, তাহলে আগামী প্রজন্ম তাকে ক্ষমা করবে না।
প্রসঙ্গত, সাব্বির আলির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। এর আগের বছরেও সাব্বিরের বিরুদ্ধে কলেজে গুণ্ডাগিরির অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। এরপরে তার কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল হাইকোর্ট। কিন্তু তারপরেও সাব্বির ও তার দলবল কলেজ ক্যাম্পাসের দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বলেছেন, “সাব্বিরের দাপটে আমি কলেজে যেতে পারি না। বাড়ি থেকে কাজ করি। কলেজে গেলে ওর ছেলেরা আমাকে হেনস্থা করে। যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জার।”
দিন কয়েক আগে হরিণঘাটা থানা এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে সরস্বতী পুজো বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি। পুজো করলে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এবার এই ঘটনা ঘটল খোদ কলকাতার বুকে।