পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, ১৭ এপ্রিল: বেহাল নির্মীয়মান রাস্তার ওপর বেপরোয়া লরির ধাক্কায় মৃত্যু হল দু’জনের। লরিতে আগুন লাগানোর চেষ্টা উত্তেজিত জনতার। ঘটনাকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। ঘটনাস্থলে হাজির হয় প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিক সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন দু’নম্বর ব্লকের বেলদা থানার জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির দিঘা পুকুর এলাকায়।
ঘটনায় জানা যায়, দ্রুত গতিতে একটি লরি এগরার দিক থেকে বেলদা দিকে আসার সময় বেলদা থানার জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির দিঘা পুকুর এলাকায় অপর একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে রাস্তার কাছে থাকা দু’জন ব্যক্তিকে চাপা দিয়ে দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। মৃত দুই ব্যক্তির নাম জগন্নাথ ভদ্র (বয়স ২৮ বছর) ও বিশু জানা (বয়স ২৭ বছর)। দুজনেরই বাড়ি দিঘা গ্ৰামে। এরপর স্থানীয় উত্তেজিত জনতা লরিটিকে ঘিরে ধরে। ততক্ষণে লরির চালক ওখান থেকে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বেলদা থানা ও জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ। বারবার এই দুর্ঘটনা ঘটার ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয়রা। এরপর উত্তেজিত জনতার সঙ্গে উপস্থিত পুলিশের বাকবিতণ্ডা, এমন কী পরে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এরপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বেলদা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক। সেই সময় ওই উত্তেজিত জনতাদের মধ্যে অনেকে পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ নিয়ে ওই লরিতে ছুঁড়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। বেলদা থানার পুলিশ ও জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা এবং এসডিপিও তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। ওই সময় ওই দাহ্য পদার্থ গিয়ে পড়ে এসডিপিও’র চোখে মুখে। কয়েকজন পুলিশ কর্মী এবং স্থানীয় কয়েকজন এরপর মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে দূরে নিয়ে গিয়ে জল ছিটিয়ে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। ঠিক ওই সময় লরিটিতে কেউ বা কারা আগুন লাগিয়ে দেয়। যদিও তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা তৎপরতা সঙ্গে ওই আগুন নিভিয়ে দেন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, ঘটনার আঁচ বুঝতে পেরে ঘটনাস্থলে হাজির হয় দমকলের একটি ইঞ্জিন। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে বেলদা থানার পাশাপাশি একাধিক থানা এলাকা থেকে হাজির হয় পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলে হাজির হন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ২ নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক। এরই মাঝে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় বেলদা- কাঁথি রাজ্য সড়কের দীঘা পুকুর এলাকায়।
উত্তেজিত জনতাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তা সংস্কার করতে গিয়ে বেহাল অবস্থার জন্য এই ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অবিলম্বে এই রাস্তা দ্রুত মেরামত করা হোক। না হলে রাস্তায় যাতে ধুলো না উড়ে তার জন্য রাস্তাতে অনবরত জল দেওয়ার ব্যবস্থা করুক রাস্তা মেরামতকারী সংস্থা। কারণ এই বেহাল রাস্তা এবং অত্যাধিক ধুলোর কারণে দেখতে অসুবিধা হওয়ায় এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করুক পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া এদিনের এই ঘটনায় যে সকল ব্যক্তিরা মারা গেছেন তাদের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক পুলিশ প্রশাসন, বলে দাবি এলাকাবাসীদের।
তবে ওই উত্তেজিত জনতাদের মাঝে যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দেয় এদিন পুলিশ প্রশাসনের কর্মীরা। পরে পুলিশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর রাত প্রায় বারোটার পর ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ দুটি নিয়ে যায় পুলিশ। পাশাপাশি লরিটিকে আটক করেছে তারা। এরপর ঘটনাস্থলের যানজট মুক্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে পুলিশ প্রশাসন।