আমাদের ভারত, ২১ মে: মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় ৩ সদস্যের কমিটির রিপোর্ট আজ কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়েছে। রিপোর্টে উঠে এসেছে বিস্ফোরক নানা তথ্য। রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলেছেন বলে তার রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মেহবুব আলম। ঘটনাস্থলে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। ১১ এপ্রিল শুক্রবার দুপুর আড়াইটের পর দুষ্কৃতি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করেন মেহবুব। এরপরে চলে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙ্গচুরের মতো ঘটনাগুলি। রিপোর্ট অনুযায়ী বেদবোনা গ্রামে ১১৩টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোকানপাট লুটপাট হয়েছে। ভাঙ্গচুর করা হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য, এই ঘটনার সময় স্থানীয় পুলিশ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল এবং ঘটনায় কোনরকম হস্তক্ষেপ করেনি।
এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে রাজ্যের শাসক দলকে তুলোধোনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করেছিলেন, এই ঘটনায় বাইরে থেকে আসা লোক জড়িত। অনেক তৃণমূল নেতা বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, যে তারা গেট খুলে দিয়ে দুষ্কৃতীদের ঢুকতে দিয়েছে। বলা হয়েছিল, দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশ থেকে এসে গন্ডগোল করে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু আজকের হাইকোর্টের রিপোর্ট স্পষ্ট বলছে স্থানীয় মানুষ এই হামলার নেতৃত্বে ছিল। তাহলে কেন মুখ্যমন্ত্রী বারবার রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করলেন? কেন বারবার মিথ্যে বললেন? আসলে তিনি সত্যিটা চাপা দিতে চেয়েছিলেন। কারণ, যারা হামলা করেছে তারা তৃণমূল আশ্রিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে চেয়েছেন। এটা আজ প্রমাণিত যে রাজ্যবাসীকে ধোকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যের মানুষকে মিথ্যে কথা বলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আপনি ক্ষমা চান। বাংলার মানুষকে বোকা বানানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যা কথা বলছেন, প্রকাশ্যে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, মাসেরগড় হিজলতলা, শিউলিতলার ডিগড়ি থেকে মুসলিম দুষ্কৃতীরা এসে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙ্গচুর করেছে এবং তারা গামছা ও কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে এসেছিল।
একই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের হিংসার তদন্তে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একটি সিট গঠন করা হয়েছে। তারা কোনো রিপোর্ট দিতে পারেনি, সেকথাও মনে করিয়ে দেন সুকান্ত মজুমদার। সুকান্ত মজুমদারের কথায়, দাঙ্গাকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদের হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। নিজে কথা বলেছেন, হিংসা বিধ্বস্তদের সঙ্গেও। মুর্শিদাবাদে স্পর্শকাতর এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প করার পক্ষে সাওয়াল করেছেন। সেই সময়ও তিনি দাবি করেছিলেন, আদতে যারা হিংসা করেছেন সেই তথ্য দ্রুত সামনে আসবে। হাইকোর্টের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে এবার বিঁধলেন রাজ্য সরকারকেও।