আমাদের ভারত, ৩ আগস্ট: পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশের মাটির তলায় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার রয়েছে। হ্যাঁ, এমনটাই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক। তাদের ভাষায় তেলের উপর ভাসছে পশ্চিমবঙ্গের একাংশ। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডারও রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর সংলগ্ন এলাকায়। এই তেল, গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন করা সম্ভব হলে পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক অর্থনীতি আমূল বদলে যাবে। কিন্তু সেই তেলের খোঁজে প্রয়োজনীয় ড্রিলিং- এর অনুমতি দিচ্ছে না রাজ্য সরকার বলে দাবি কেন্দ্রের।
পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্থানে সায়সমিক সার্ভে চালিয়েছে কেন্দ্র। তাতে অন্তত চারটি স্থানে তেল ও গ্যাসের বিপুল ভান্ডার রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানাগেছে। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক জানিয়েছে, অশোকনগর- ১-এ তেল ও গ্যাস, অশোকনগর-২- এ গ্যাস, কনকপুল-১- এ গ্যাস, পাটুলি-১- এ হাইড্রোকার্বন ছাড়াও অশোকনগন ১ ও কনকপুল ১ এলাকার মাটির নিচে হাইড্রোকার্বনের ভান্ডার রয়েছে। গ্যাসের ভান্ডারে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে রানাঘাট -২ এলাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিস্থিতি ইতিবাচক হলে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের চেহারা বদলে যেতে বাধ্য। পেট্রো প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়বে রাজ্যের। যার হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের আর্থসামাজিক ছবি পাল্টে যাবে।
কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায়, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের একাংশে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থাকার সম্ভাবনা ধরা পড়েছে। সেই কারণে ইতিমধ্যে ১১৬১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তা উত্তোলনের সমস্ত পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছে ওএনজিসি বা অয়েল ইন্ডিয়া। কিন্তু সেই কাজ শুরুর আগে ড্রিলিং- এর লক্ষ্যে রাজ্যের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়াম মাইনিং লিজ বা ছাড়পত্র প্রয়োজন। মূলত তেলের ভান্ডারের পরিমাণ, তা মাটির কত নিচে রয়েছে, তা উত্তোলন লাভজনক হবে কিনা তা দেখার জন্য ওই ড্রিলের প্রয়োজন রয়েছে।
ছাড়পত্রের জন্য ২০২০ সালে নবান্নের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ওএনজিসি। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এবং এ বছরের ১২ জানুয়ারির পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি লিখেছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। ৪ জুলাই রাঁচিতে ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিলের বৈঠকেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি তোলা হয়, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
সূত্রের খবর, রাজ্যের বক্তব্য, অশোকনগরের প্রকল্পের ড্রিলিং কোথা থেকে শুরু, কোথায় গিয়ে শেষ, তা বোঝা যাচ্ছিল না। তাই তাতে বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ার কারণে সম্ভবত তা আটকে রয়েছে।
বিজেপি সাংসদ শ্রমিক ভট্টাচার্যের দাবি, সমীক্ষার কাজে ওএনজিসি এবং অল ইন্ডিয়া লিমিটেড অর্থ বিনিয়োগ করে ফেলেছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নে ঝুলিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ পুরীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করা হবে।