Birbhum, Brojo Mukhopadhyay, চলে গেলেন আমলা ধমকানো বীরভূম জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি ব্রজ মুখোপাধ্যায়

আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ৩ আগস্ট: চলে গেলেন আমলা ধমকানো বীরভূম জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি ব্রজ মুখোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল (৮৭)। বার্ধক্য জনিত কারণে দীর্ঘ রোগভোগের পর তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাক্তন সভাধিপতির মৃত্যুতে শোকের ছায়া বাম মহলে। রবিবার তাঁর দেহ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে দান করা হবে।

দিনটা ১৯৩৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর। বীরভূমের মল্লারপুরের রায়পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ব্রজ মুখোপাধ্যায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, বিটি। ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির অলিন্দে ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে গঠিত গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের প্রথম বীরভূম জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালে তিনি সিপিআই(এম)-এর সদস্য হন। প্রথম জীবনে শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে সিপিআই(এম)- এর সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে মানুষের কাজে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে রেল ধর্মঘট এবং আইন অমান্য আন্দোলন করতে গিয়ে ১ বছর ২ মাস ১৮ দিন কারাবাস করতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৭৮ সালে তিনি বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতির পদে বসেছিলেন। দীর্ঘ ২০ বছর আপোষহীন ভাবে পদ সামলেছেন। পান থেকে চুন খসলেই ধমক দিয়েছেন আমলাদের। সাক্ষরতা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অভাবনীয়।

সভাধিপতি পদ ছাড়ার আগে ১৯৯৮ সালে বীরভূমের অধিকার পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “মানুষের চেতনার উন্মেষ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের পরিপূর্ণ বিকাশের স্বার্থে সাক্ষরতা আন্দোলন অপরিহার্য”। তাঁর দাবি ছিল, জেলায় ৮৩ শতাংশ মানুষ সাক্ষর। তিনি বলতেন, “আগে শিল্প, পরে শ্রমিক। শ্রমিকদের জন্য শিল্প নয়, শিল্পের জন্য শ্রমিক”।

তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান, মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লপা হেমব্রম মহাবিদ্যালয়, বীরভূম ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং বক্রেশ্বর থার্মাল পাওয়ার নির্মাণ। খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে পার্টির বীরভূম জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালেও তিনি বীরভূম লোকসভা নির্বাচনে শতাব্দী রায়ের কাছে পরাজিত হন। তারপর থেকে আর নির্বাচনে লড়েননি। তবে দলের হয়ে কাজ করে গিয়েছেন আমৃত্যুকাল। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিটব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র ডোম, বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ সহ অন্যান্য বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও শোক জ্ঞাপন করা হয়েছেন। শনিবার রাতেই কলকাতা থেকে মরদেহ প্রয়াত নেতার বাসভূমি সিউড়ি নিয়ে আসা হবে।

প্রয়াত নেতা রেখে গিয়েছেন স্ত্রী, দুই পুত্র, দুই কন্যা ও তাদের পরিবারবর্গকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *