Workers, Birbhum, চেন্নাইয়ে প্রাণ গেল বীরভূমের পরিযায়ী শ্রমিকের

আশিস মণ্ডল, বোলপুর, ২৩ ফেব্রুয়ারি: পরিবারের জন্য অন্ন যোগাড় করতে চেন্নাই পাড়ি দিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না বীরভূমের নানুরের বাসিন্দা এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মাটি কাটার কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই নানুর থানার ন’নগর কড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের শেরপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মৃত শ্রমিকের নাম রিন্টু শের। বয়স ৩২ বছর। রিন্টু বছরখানেক আগে চেন্নাই গিয়েছিল রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। চেন্নাইয়ে একটি বহুতলের সামনে গত শুক্রবার দুপুরে জেসিবি মেশিন দিয়ে নিকাশি নালার জন্য মাটি কাটার কাজ করছিল সে। মাটির তলায় বিদ্যুৎবাহী তার ছিল। সেটা জানা ছিল না রিন্টুর। ফলে মাটি সরানোর সময় তড়িতাহত হন তিনি। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। 

মৃত রিন্টুর মা ডালিয়া বেওয়া অসহায় শোকাহত শুষ্ক চোখে চেয়ে আছেন কখন ছেলের দেহ ফিরবে। তিনি বলেন, “ছেলে আমার জানতো না, মাটির তলে বিদ্যুতের তার আছে। বৃহস্পতিবার রাতেও বৌমার সঙ্গে কথা হয়। ঈদের আগে আসবে বলেছিল। কিন্তু আর ফেরা হল না।” 

বাড়িতে বিধবা মা আর দুই কন্যা সন্তান সহ স্ত্রীকে রেখে গেলেন রিন্টু। সদ্য স্বামী হারা জুলিখাতুন বলেন, “চার পাঁচ বছরের দুই কন্যা সন্তান এবং বয়স্ক বিধবা শাশুড়ি নিয়ে আমি কী করবো জানি না। পরিবারের একজন উপার্জনক্ষম ছিলেন, তিনি আমার স্বামী।”

মৃতর খুড়তুতো ভাই বুধু শেখ জানান, রাজ্য সরকারের পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদ বোর্ডে নাম তোলা নেই রিন্টুর। ফলে সরকারের স্থায়ী প্রাকল্পিক সুবিধা পাবে না মৃতের পরিবার। তবে আশ্বাসের কথা শোনান জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফয়েজুল হক ওরফে কাজল শেখ। কাজল শেখ বলেন, “গণমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে সকল পরিযায়ী পরিবারের মানুষকে বলবো দুয়ারের সরকার ক্যাম্পে বা অফিসে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করুন। না হলে,  প্রাকল্পিক সুবিধা পাবেন না।”

কাজল আফশোস করে বলেন, “রিন্টু শেখ পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে পরিযায়ী শ্রমিক পর্ষদে নাম নথিভুক্তকরণ করেনি। তার ফলে মৃতের পরিবার এককালীন ২ লক্ষ টাকা এবং মৃতদেহ নিয়ে আসার জন্য খরচ হিসাবে ২৫ হাজার টাকা পাবেন না। যদিও আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছু অর্থ সাহায্য করেছি। এর আগে বাম জমানায় এই গ্ৰামে ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেই ঘর নতুন করে নির্মাণে পাশে ছিলাম। সারা জীবন থাকবো। কিন্তু সেটা বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হলো, মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী মানুষের জন্য যে এই সুবিধা করে দিয়েছেন, তার সম্পর্কে মানুষের আরও সচেতনতা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *