সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২ মার্চ: মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিটের দূষণ রোধে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফ্লু গ্যাস ডি-সালফারাইজেশন ইউনিটের উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে ভার্চুয়ালি এই প্রজেক্টের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিভিসি ভারতবর্ষের জাতীর সেবায় নিয়োজিত অন্যতম সংস্থা। একই সাথে এদিন তিনি ডিভিসির রঘুনাথপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২৬০ মেগাওয়াটের সুপার ক্রিটিক্যাল দুটি ইউনিটেরও উদ্বোধন করেন। এদিন মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মী ও আধিকারিকরা গর্বের এই প্রজেক্ট নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই ভার্চুয়ালি উদ্বোধন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ সুভাষ সরকার, বাঁকুড়া, শালতোড়া ও ছাতনার বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা, চন্দনা বাউরি ও সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। আমন্ত্রন সত্ত্বেও এদিনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখার্জি সহ তৃণমূলের জনপ্রতিধিরা।
মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পের এই এফডিজি ইউনিট প্রসঙ্গে এমটিপিএসের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ও প্রকল্প প্রধান সুশান্ত ষন্নিগ্রাহী বলেন, আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও পুরোপুরি তা রোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। দেশের সব তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই তা ঘটছে। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী সব কা সাথ সব কা বিকাশের সাথে সাথে ঘোষণা করেছিলেন প্রকৃতিকে দূষণ মুক্ত রাখতে হবে। তাই আমরা এফজিডি ইউনিট তৈরি করার বরাত দিই লার্সেন এন্ড টুব্রো কোম্পানিকে। বর্তমানে এমটিপিএসে ৮টি ইউনিট রয়েছে। এদিন থেকে ৭ ও ৮ ইউনিটের এফজিডি প্রকল্পের কাজ শুরু হলো।
সুশান্ত ষন্নিগ্রাহী বলেন, কয়লাতে ক্ষতিকারক সালফার থাকে। চিমনি দিয়ে যে ধোঁয়া বের হতো তার সঙ্গে ছাই, কার্বন, সালফার ইত্যাদি বের হয়, যার ফলে বায়ু, মাটি, জল প্রভূতভাবে দূষিত হয় এবং প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখন এফজিডি চালু হওয়ার ফলে চিমনি দিয়ে যে ধোঁয়া বের হচ্ছে তা ধোঁয়া নয়, স্টিম। পাশাপাশি এরফলে ছাই থেকে জিমনাসিয়াম তৈরি হচ্ছে তা ডিভিসি বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করে লাভবান হবে। সিমেন্ট কারখানাগুলিতে এই জিমনাসিয়ামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রাজ্য ও প্রতিবেশী রাজ্যের সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে বরাত আসছে। এই ইউনিট ২টি থেকে দৈনিক ৩০০ মেট্রিক টন জিমনিসিয়াম উৎপাদন হবে। এমটিপিএস কর্তৃপক্ষ ২০০ টাকা মেট্রিক টন হিসাবে বিক্রি করছে। তিনি আরও বলেন, বাকি ১ থেকে ৬ নম্বর ইউনিটের জন্যও এফজিডি ইউনিটের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। এফজিডি ইউনিটের সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, ডিভিসি যেমন ভারতবর্ষের গর্ব তেমনি মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পও বাঁকুড়ার গর্ব। এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প সিএসআর- এর মাধ্যমে ১০ কিমি ব্যসার্ধের সমস্ত গ্রামগুলিতে যে উন্নয়নমূলক কাজ করছে তা নজির বিহীন। কিন্তু ডিভিসির এই গর্বের দিনেও বিতর্ক রয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মী ইউনিয়ন আইএনটিইউসি পরিচালিত কর্মচারী সংঘের সম্পাদক অরিন্দম ব্যানার্জি বলেন, এই দিনটি ডিভিসি কর্মীদের কাছে অত্যন্ত উজ্জ্বল দিন। কেননা ডিভিসি হলো স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর স্বপ্নের প্রকল্প। ডিভিসির এই সাফল্যে কংগ্রেস সরকারের ভূমিকা পুরোটাই। নরেন্দ্র মোদী তাতে স্ট্যাম্প লাগানোর চেষ্টা করলেন। সিটু নেতা সমীর বাইন এবং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক বিদ্যুৎ কর্মকাররা বলেন, দেখে মনে হল, আজ এফজিডি ইউনিট উদ্বোধন নয়, মনে হচ্ছে যেন বিজেপির কর্মী সম্মেলন হচ্ছে।