আমাদের ভারত, ২৬ মার্চ: সন্দেশখালির আন্দোলনকারী তথা বসিরহাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি রেখা পাত্রকে শক্তি স্বরূপা বলে সম্বোধন করেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে যে বিরাট বিক্ষোভ শুরু হয়েছে তার মুখ ছিলেন এই রেখা পাত্র।
কি কথা হল তাদের? রইল তাদের কথোপকথন…
প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই রেখা পাত্রকে রেখাজি বলে তাকে নমস্কার জানান। রেখাও পাল্টায় নমস্কার জানান প্রধানমন্ত্রীকে। একই সঙ্গে রেখা ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রীকে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী সবার প্রথমে, “আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই” বলে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান রেখা পাত্রকে। বলেন, “অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন কেমন লাগছে?” উত্তরের রেখা বলেন, “খুব ভালো লাগছে। আপনার হাত আমার মাথার উপর রয়েছে।আমার সন্দেশখালির মা বোনেদের মাথার উপর আপনার হাত রয়েছে। মনে হচ্ছে যেনো ভগবান রামজির হাত রয়েছে আমাদের মাথার উপর।”
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মা-বোনেদের হাত আমার মাথার উপর রয়েছে। রেখাজি আপনার মেসেজ পেয়েছি। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব। আপনার নাম ঘোষণা হল যখন কি পরিস্থিতি হল?”
রেখা পাত্র উত্তরে বলেন, “আমার সঙ্গে যা হয়েছে বসিরহাটের মা-বোনেরা অত্যাচারিত হয়েছেন। যারা অত্যাচার করেছে তাদের জেল হয়েছে। ইডির হাতে চলে গিয়েছে। শাস্তি চাই। ২০১১ সাল থেকে ভোট দিতে পারছি না। আমরা চাই ভোট দিতে। ভোট দিতে পারলে সন্দেশখালির মা বোনেরা খুশি হবেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার বিশ্বাস, আপনার কথা নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছবে। নির্বাচন কমিশন সুনিশ্চিত করবে যাতে সকলে ভোট দিতে পারেন। আশা করবো নির্বাচন কমিশন আপনার কষ্ট বুঝবেন। দুঃখের কথা আপনি ভোট দিতে পারেননি। বাংলায় কিভাবে সরকার চলছে?”
এরপর মোদী প্রশ্ন করেন, “এই নির্বাচনে আপনাকে প্রার্থী করা হলো প্রতিবেশীরা কি বলছেন?” রেখা জানান, “সকলে খুশি হয়েছেন। তৃণমূলের দু’ চারজন মা বোনেরা প্রথমে বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু এখন মেনে নিয়েছেন। ওদের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। আমি তো সকলের হয়ে লড়বো।”
প্রধানমন্ত্রী এর পরে বলেন, “রেখাজি শুনছি বিজেপি আপনাকে প্রার্থী করে বড় কাজ করেছে। রাজনীতিতে এটা বিরল যে বিরোধী যারা আপনার বিরোধিতা করেছেন তাদেরও ভালো চাইছেন। আপনি যা বলছেন তৃণমূলের যারা বিরোধিতা করেছেন তাদের ওপর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। খুব ভালো লাগলো শুনে, সারা দেশ আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করবেন।”
মোদী জিজ্ঞেস করেন, “বসিরহাটের মানুষ বিশেষ করে মহিলারা আপনাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কেমন লাগছে?”
রেখা জানান, “ভালো লাগছে। আশা করব ভোটে সকলের সমর্থন পাব। আমার স্বামী চেন্নাইয়ে কাজ করেন। অনেক পরিশ্রম করে সংসার চালাই। এমন কিছু করব যাতে কাউকে বাংলার বাইরে যেতে না হয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনার যা আত্মবিশ্বাস রয়েছে তাতে নিশ্চয়ই আপনি দিল্লি পৌঁছবেন ভোটে জিতে। সন্দেশখালিতে এত বড় লড়াই লড়লেন আপনি শক্তি স্বরূপা। এতগুলো লোককে জেলে পাঠালেন কোনো ধারণা রয়েছে? কত বড় সাহসের কাজ করেছেন?”
রেখা বলেন, “মা-বোনেদের সমর্থন ছিল বলেই করতে পেরেছি। ওদের সঙ্গে নিয়েই চলবো আগামীর পথ। আমি আপনার ছোট বোনের মতো।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু বসিরহাট নয়, পুরো বাংলার মা-বোনেদের সম্মানের জন্য লড়বো। আপনি পরিশ্রম করে সংসার চালান, সব রকম ভাবে পাশে থাকবো। রেখাজি খুব ভালো লাগলো কথা বলে। আপনার উৎসাহ দেখে ভালো লাগছে। বাংলা শক্তি পুজোর ভূমি, দুর্গা পুজোর ভূমি। যেভাবে কষ্ট করে কাজ করছেন খুব বড় ব্যাপার। সন্দেশখালির ঘটনাকে দেশের মধ্যে তুলে ধরা ছোট ব্যাপার নয়। নারী শক্তি বিশেষ রূপে বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আশীর্বাদ দেবে।”
মোদী বলেন, “বাংলায় তৃণমূল সরকার আছে, মানুষ বিরক্ত। কিন্তু কিভাবে তৃণমূল সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, কেন্দ্রের প্রকল্পের নাম কিভাবে বদলেছে তা বলুন সকলকে।”
এদিকে রেখাও ২০১১ সাল থেকে ভোট চুরি হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীকে। বলেন, “স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চাই। মা-বোনেদের সম্মান রক্ষা করা হোক। যেসব ভাইকে মারধর করা হচ্ছে তা দেখব। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনার যা সাহস রয়েছে তাতে ঈশ্বর আপনার সঙ্গে রয়েছেন।প্রত্যেক নাগরিকের সুরক্ষা এবং নারীর সুরক্ষার জন্য যেভাবে চিন্তা করছেন জনপ্রতিনিধি হওয়ার সব লক্ষণ রয়েছে আপনার। আমার অনেক শুভকামনা রইল। সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে চলুন।”