JPD, Medical council, রাজ্যের মেডিকেল কাউন্সিল নিয়ে তোপ জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর

আমাদের ভারত, ৩০ নভেম্বর: “অভয়ার ধর্ষণ ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ও হুমকি সংস্কৃতির হোতা হিসেবে যাদের নাম প্রতিবাদ মুখর জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাদের সাথে আধুনিক ঔষধির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিল’-এর নাম যুক্ত হয়ে গেছে। এই ঘটনা অভূতপূর্ব ও চূড়ান্ত লজ্জার।” শনিবার এই মন্তব্য করলেন জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস,পঃবঙ্গ-র যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ ও ডাঃ হীরালাল কোনার।

তাঁরা জানান, “বর্তমান মেডিকেল কাউন্সিলের নানা রকম অন্যায়, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রত্যেকদিন বেআব্রু হয়ে চলেছে। বেশ কিছু বিষয় ও অনাচার আমাদের ভাবাচ্ছে, বিচলিত করছে এবং সমাজের বুকে এই সব বিষয়ের অভিঘাত ভয়ঙ্কর বলেই আমরা মনে করি। সমস্ত চিকিৎসক সমাজ ও সমাজের সর্বস্তরের জণগণকে সাথে নিয়ে রাস্তার আন্দোলন তীব্র করাই বর্তমান সময়ের দাবি।

৯ই আগস্ট, অভয়া হত্যার দিনেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায়, উদ্যেশ্যপূর্ণ ও বিশেষ মিটিংয়ের পর, বিগত ৪ মাস কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই, অদ্ভূত হিরণ্ময় নীরবতা পালন করে যাচ্ছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল। জানতে পারা যাচ্ছে ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় আবার কাউন্সিল সভা হবে যা অজ্ঞাত কারণে এতদিন বন্ধ ছিল।

আমাদের আশঙ্কা, মেডিক্যাল কাউন্সিলের যে সমস্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে অভয়ার ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার উঠেছে, তাদেরকে আড়াল করা বা পুনঃস্থাপন করার প্রচেষ্টা সহ, হুমকি সংস্কৃতির হোতাদের পুনঃস্থাপন ও দুর্নীতির সিন্ডিকেটকে সার জল দিয়ে পুষ্ট করার নীল নক্সা তৈরি করা শুরু হবে।

আমাদের তাই স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা—
▪︎ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের লাগাতার চাপে রাজ্য সরকার এবং স্বাস্থ্য দপ্তর সরাসরি সরকারী নথির মাধ্যমে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে বর্তমান রেজিস্ট্রারের নিয়োগ ২০১৯ সাল থেকে আইন বহির্ভূত ও অবৈধ। ফলে তার আহূত সভার আইনী বৈধতা আদৌ সম্ভব?

▪︎ এই রেজিস্ট্রারের তত্ত্বাবধানেই (উনিই ছিলেন রিটার্নিং অফিসার) ২০২২ সালে পরিচালিত হয় বিতর্কিত ও জালিয়াতির কাউন্সিল নির্বাচন। সেই কারণেই স্বাভাবিক প্রশ্ন যে আধিকারিকের অবস্থানই অবৈধ, তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নির্বাচন কি করে বৈধ হতে পারে? আইনের স্বাভাবিক চোখে বর্তমান মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈধ হওয়া সম্ভব?

▪︎ অবৈধ ভাবে পদ আঁকড়ে থাকা রেজিস্ট্রার মহোদয়ের স্বাক্ষরিত মডার্ন মেডিসিন প্র্যাকটিসের অধিকার দেওয়ার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট কি আদৌ বৈধ?

▪︎ অসমর্থিত সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে এই কাউন্সিলের সদস্য বা এদেরই মনোনীত পেনাল এথিক্যাল কমিটির সদস্যরা, যারা কিছু দিন আগেই কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ থেকে অপসৃত হয়েছেন—হুমকি সংস্কৃতির মাথা সেই অভীক/ বিরূপাক্ষ ও তাদের সহযোগীরা আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে চলেছেন এই মিটিংয়ে। অভয়া হত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকায় অভিযুক্ত, তথ্য প্রমাণ লোপাটের মূল কারিগর ও নানা দুর্নীতির মাথা, বর্তমানে জেলে থাকা, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষর রেজিস্ট্রেশন নাকি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানা যাচ্ছে। মেনে নেবে নাগরিক সমাজ?

▪︎ শুধু তাই নয়, থ্রেট কালচার, অনাচার, দুর্নীতি সহ অজস্র অভিযোগে অভিযুক্ত অভীক/ বিরূপাক্ষর (যারা সরকারী নিয়মে সাসপেন্ড হয়ে আছে) বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। দেড় মাস আগে জমা পড়া রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়। তাদের আচরণ পেশাগত ভাবে সম্পূর্ণ ভাবে অগ্রহণযোগ্য ও নৈতিকতার বৃত্তের সম্পূর্ণ বাইরে। সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক,অভয়ার নারকীয় হত্যার সময়ে যাদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে, তাঁদের আবার মেডিকেল কাউন্সিলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ মেনে নেওয়া যাবে? এই সমস্ত ব্যক্তিদের পুনঃসংস্থাপিত করার প্রচেষ্টা আগামীতে এক ভয়াবহ অশনি সংকেতের ইঙ্গিতবাহী নয় কি?

▪︎ বর্তমান কাউন্সিলের সভাপতি অজস্র দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার স্ক্যানারে। সাম্প্রতিক সময়ে ইডি / সিবিআই-এর বারবার অভিযান হয়েছে তাঁর বাড়িতে ও নার্সিংহোমে। আধুনিক ওষধির নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ পদে তাঁর বসে থাকায় কি বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে? চিকিৎসক সমাজের কাছে?

▪︎ অভয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে কাউন্সিলের অনৈতিক কাজকর্মের প্রতিবাদে কিছু কিছু সদস্যের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা কি অনৈতিকতা নয়? তাহলে কি বুঝতে হবে সব নাটক ছিল?

▪︎ প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ, সরকার মনোনীত বর্তমান কাউন্সিলের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় আইএমএ-র প্রাক্তন জাতীয় সভাপতির লিখিত বয়ানে স্পষ্ট যে, জনগণের পয়সায় অবৈধ উপায়ে উদরপূর্তি, পকেটপূর্তি ঘটেছে কয়েকজন সদস্যর মাসিক ভাতা গ্রহণের মাধ্যমে– যা চূড়ান্ত আইন বিরূদ্ধ। যারা এই ভাতা নিয়েছেন তাঁরা কি ফেরত দেবেন সেই টাকা?

▪︎ দলীয় রাজনীতির আখড়া ও দুর্নীতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হওয়া মেডিক্যাল কাউন্সিলের পক্ষে সাধারণ মানুষকে আদৌ তাদের অভাব অভিযোগের সুষ্ঠু স্বচ্ছ, দুর্নীতিবিহীন সমাধান দেওয়া সম্ভব? মনে রাখতে হবে এই কাউন্সিল শুধু চিকিৎসকদের নয় একইভাবে জড়িত আছে সাধারণ মানুষের স্বার্থ।

▪︎ আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, এই সমস্ত বিষয় গুলি নিয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য রাজ্যের মাননীয় মুখ্য সচিবের কাছে ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল’ চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা ও আলোচনার দাবি জানালেও, অদ্ভুত নীরবতা পালন করে চলেছে সর্বোচ্চ প্রশাসন।

আমরা ভাবছি। ভাবছে মানুষ। ডুবছে নীতি। চলছে বিরামহীন মিথ্যার বেসাতি। কিন্তু কষ্ট পাওয়া নয়। স্বেচ্ছাচারের ক্লেদ সাফ করতে, আগুন বাড়ছে জনমানসে, তামাম চিকিৎসকের মননে। এই ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিলের ভ্রষ্টাচার বন্ধ করতেই হবে যে কোনও মূল্যে। দ্বিতীয় অভয়া হতে দিতে পারি না আমরা। আগামীতে বর্তমান কাউন্সিল সাফাই অভিযানে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। আশা করি পাশে থেকে সাথে পাব সমস্ত স্তরের প্রতিবাদী জনসমাজকে। অবৈধ কাউন্সিল সাফাই চলছে, চলবে। থামছি না আমরা। লড়াই শেষ তক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *