আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ৩১ জানুয়ারি: কুলতলি মিলন তীর্থ সোসাইটির উদ্যোগে, কেন্দ্রীয় পাট ও সহযোগী তন্তু গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশানাল জুট বোর্ডের সহযোগিতায় সুন্দরবনের মহিলাদের জন্য সুন্দরবন স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের উদ্বোধন হলো শুক্রবার। এদিন বিকেলে বাসন্তীর কুলতলিতে এই সেন্টারের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় পাট ও সহযোগী তন্তু গবেষণা সংস্থার ডিরেক্টর গৌরাঙ্গ কর, ন্যাশনাল জুট বোর্ডের ডেপুটি ডাইরেক্টর দেবদূত মুখোপাধ্যায়, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার রিজিওনাল ম্যানেজার মনোজ কুমার ও কুলতলি মিলনতীর্থ সোসাইটির চেয়ারম্যান লোকমান মোল্লা।
সুন্দরবনের প্রায় সমস্ত জমিই এক ফসলি। তাছাড়া মাঝে মধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই চাষবাসও নষ্ট হয় ফি বছর। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে এলাকার বহু মানুষই ভিনরাজ্যে কাজের জন্য পাড়ি দেন। সেখানে গিয়েও নানা বিপদের মধ্যে পড়তে হয় অনেককেই। কিন্তু এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজই তাঁদেরকে করতে হয় কিছুটা বাধ্য হয়েই। অন্যদিকে এই এলাকার মহিলারা দীর্ঘক্ষণ নদীতে মিন বা মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের মহিলাদের নানা ভাবে স্বনির্ভর করতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে চলেছে কুলতলি মিলনতীর্থ সোসাইটি। বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ থেকে শুরু করে গ্রামের মহিলাদের রঙিন মাছ চাষে উৎসাহিত করে অনেককেই স্বনির্ভরতার দিশা দেখিয়েছেন তাঁরা। এবার পাটজাত দ্রব্য তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদেরকে স্বনির্ভরতার নতুন পথ দেখাতে চান তাঁরা।
প্রাথমিক ভাবে ২০ জন মহিলাকে কেন্দ্রীয় সংস্থায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে এই মহিলারা স্বনির্ভরতার দিশা দেখাতেই এলাকার অন্যান্য মহিলাদের এই কাজে উৎসাহিত করতে শুরু করেন লোকমান ও তাঁর সহযোগীরা। গ্রামের মহিলারা গৃহস্থালির কাজ সামলে এই কাজ করতে উৎসাহ দেখানোয় বাসন্তীতেই তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৫টি আধুনিক মেশিন কেনা হয়েছে সংস্থার তরফে। ১৫ জন মহিলাকে একসঙ্গে দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে সংস্থার তরফেই তাদের কাঁচামাল সরবরাহ করা হবে এবং তাদের উৎপাদিত সামগ্রী এই সংস্থাই বিক্রির ব্যবস্থা করে দেবে।
পাটজাত দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখেই উৎসাহিত হয়েছে গ্রামের মহিলারা। কেন্দ্রীয় পাট ও সহযোগী তন্তু গবেষণা সংস্থার ডিরেক্টর বলেন,
“এটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও মায়েরা, বোনেরা এই কাজে উৎসাহিত হবে।”
ন্যাশাল জুট বোর্ডের ডেপুটি ডাইরেক্টর বলেন, “তৈরি সামগ্রী বিভিন্ন মেলায় বিক্রির সুযোগ করে দেবো আমরা। সুন্দরবনের মহিলাদের স্বনির্ভরতা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।”
কাজ শিখে কোনো মহিলা যদি নিজেই ব্যবসা করতে চান তার জন্য আর্থিক সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। স্টেট ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার বলেন, “ নারী শক্তির উত্থানের জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক সবসময় সঙ্গে আছে। এই স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য যে কোনো সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত আছি।”
লোকমান বলেন, “এখানকার মহিলারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী, জঙ্গলে পাড়ি দিচ্ছেন। এঁদের একটা সুস্থ জীবন উপহার দিতেই এই স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সূচনা করা হলো। আগামী দিনে সুন্দরবনের প্রতিটি গ্রামে একজন করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলা তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য, যারা সেই এলাকার মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করবেন।”