আমাদের ভারত, ৩১ জানুয়ারি: বিশ্বাস, অবিশ্বাস ও ধর্ম— মহাকুম্ভে শতাধিক হতাহত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে তসলিমা নাসরিনের মন্তব্যে সাড়া পড়েছে নেটনাগরিকদের একাংশে।
তসলিমা বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “তীর্থযাত্রায় গিয়ে লোকের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে যারা মারা যায়, তাদের জন্য, আমরা, যারা ধর্মে বিশ্বাস করি না, আমাদের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু লক্ষ্য করেছি, ধর্মে যাদের অগাধ বিশ্বাস, তাদের কষ্ট খুব কমই হয়, অথবা একেবারেই হয় না, কারও কারও তো স্বস্তি, এমনকী আনন্দও হয়। তারা মনে করে, শুধু মনে করে না, রীতিমত বিশ্বাস করে যে তীর্থযাত্রার মৃত্যু পবিত্র মৃত্যু। তারাও চায়, মরতে যখন হবেই, তখন তাদেরও তীর্থ করতে গিয়েই যেন মৃত্যু হয়। বিশ্বাস ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। বিশ্বাস ভয়ঙ্করও কম নয়।” শুক্রবার বেলা সাড়ে চারটে পর্যন্ত লাইক, মন্তব্য ও শেয়ার হচ্ছে যথাক্রমে ৪ হাজার ৫০০, ৪৪ ও ২২১।
সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ”তীর্থে মৃত্যু ধার্মিকদের কাছে পুণ্যলাভ। হজ করতে গিয়ে মরলেও ধার্মিকরা তাই বলে।” সুদীপ্ত পাল লিখেছেন, ”বিশ্বাস এমন একটা জিনিস যেটা দিয়ে মানুষের বারোটা বাজিয়েও তাকে বোঝানো যায় যে তার ভালো করা হচ্ছে।”
দীপঙ্কর বিশ্বাস লিখেছেন, ”ঠিকই বলেছেন। অন্ধ বিশ্বাস মানুষের মৃত্যু মুক্তির সমান! এছাড়া আর কোনো অজুহাত নেই! যত মৃত্যু স্বাভাবিক, আর অস্বাভাবিক যত মৃত্যু, তা অন্ধ বিশ্বাসের পথে পথে উপহার পেয়ে চলেছে মানুষ ! তারাই দেখতে পায় তাদের ওই নির্মম মৃত্যু কিন্তু শুনতে পায় না তাদের সে মুক্তির কথা। পূন্য তো মানুষের ঘোষিত শিরোপা, তাই কিছু মন বুঝ মানে আর কিছু মানুষের ধর্মীয় চিরন্তন চালাকি চলে… প্রতিষ্ঠিত মিথ্যা চির সত্যের পথে প্রতিষ্ঠা পায়। ধর্ম ব্যবসার অনেক পদ্ধতি আছে এবং তুখোড় ধর্ম ব্যাবসায়ীরা সে সব খুব ভালো প্রয়োগ করতে জানে! তবে শেষ হাতটি যে অজুহাত, সেটি বারবার প্রমিত সত্য হয়ে ওঠে! ওদের কোনো আপশোস, কোনো অনুশোচনা নেই, তাই অজুহাত খাড়া করে মানুষকে ভুল পথে যেতে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে। খাওয়া, পড়া, আরাম, আয়েশ, ভোগ বিলাসী ব্যবসায়ীদের জীবন এভাবেই চলে এবং চলবেও। যতদিন মানুষ বাস্তববাদী ও আলোমুখী হয়ে এ আঁধার হতে বেরিয়ে না আসতে চাইবে। সকল শিক্ষিত মানুষ আলোর পথ যাত্রী নন। আর অশিক্ষার অন্ধকারে তো সহস্র কোটি মানুষ আছেন!তাদের টেনে হিঁচড়ে বের করে মুক্তির আসল পথে নিয়ে যাবে? সে সংখ্যা যেটুকু যা আছে তাও সীমিত ও কখনো কখনো বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে……।”
শান্তনু রায় লিখেছেন, ”আমার চেনা বহু মানুষ আছেন, যারা সাহায্য না করে বিপদে পড়া অর্ধমৃত মানুষ ডিঙিয়ে অফিসে যায়, সন্তানকে টিফিনটুকুও বন্ধুদের সাথে ভাগ করে খেতে শেখায় না, ধান্দা মিটে গেলে উপকারীকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে, তারা প্রত্যেকেই মহাকুম্ভে জড়ো হয়েছেন। ডুব দিয়ে ফটো পোস্ট করেছেন। আমি জানি না এই ডুব একজন মানুষের পাপ কতখানি ধুয়ে দেয়, খালি মনুষ্যত্ব ও সমানুভবতার অনুভব শেখায় এমন কোনো নদী থাকলে ভালো হত। পূণ্যার্থী হতে হয় কেন তাই তো বুঝি না। তার মানে কি তারা যে পাপ করেছেন অসংখ্য নিজেরাই মনে করেন? পাপ না করলে পাপ মোচনের চিন্তা তো থাকার কথা নয়।”
অনুপ কুমার পাণ্ডে লিখেছেন, ”এই ভিড় দেখে বোঝা যায় কত অন্ধ ভক্ত, কত স্বাস্থ্য অসচেতন মানুষ আছে আমাদের দেশে। ওইভাবে স্নান করা মানেই তো একের গায়ের নোংরা আরেকজনের গায়ে লাগছে, মুখে ঢুকছে, ঠিক যেমনটা হয় এক পাত্রে অনেকজনের খাওয়ার মতো জাতিগত মিল দেখানোর অন্ধ অনুসরণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে। এটা নিয়ে কেউ ভাবেই না। আর পদপিষ্ট হয়ে মরা তো ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।”
সুরজিৎ কুণ্ডু লিখেছেন, “অন্ধ ভক্তদের অন্ধ ভক্তি কিন্তু কিছুই কমবে না। কেউ বলবে যাঁরা ওইখানে মারা গেল তাঁরা সোজা স্বর্গে যাবে, আবার কেউ বলবে এতবড় একটা অনুষ্ঠানে এটুকু তো হতেই পারে। ধর্ম নিয়ে অন্ধ বিশ্বাস আর অন্ধ ভক্তি খুবই ভয়ঙ্কর। মানুষের মস্তিষ্ককে অন্য কিছু ভাবতেই দেয় না।”