Marriage, Tarapith, থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করে তিন কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা তারাপীঠে

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ১০ মার্চ : বিয়ের আয়োজনের সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। বেলা গ়ড়াতেই আলো ঝলমলে সাজানো মণ্ডপে একে একে হাজির পাত্র-পাত্রী, আত্মীয়-পরিজন। ছিলেন পুরোহিত। রবিবার বীরভূমের তারাপীঠে একসঙ্গে তিন কন্যাকে বসানো হল বিয়ের পিঁড়িতে। তারপর বিনা পণে, বিনা খরচে বিয়ে হল রামপুরহাট মহকুমার তিন কন্যার। নবদম্পতিদের দেওয়া হল বিভিন্ন উপহার।

জয় মা তারা ভক্তবৃন্দের পক্ষে কোষাধ্যক্ষ সুভাষ সাহা, সঞ্জীব বিশ্বাসরা জানান, কয়েক বছর ধরে দরিদ্র পরিবারের কন্যাদের বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। শুধুমাত্র করোনা অতিমারির সময় বিবাহ অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল।

প্রসঙ্গত, শিলিগুড়ির সুভাষ সাহা, গৌতম কুমার পাল, ইচ্ছাপুরের সঞ্জীব বিশ্বাস, শান্তিপুরের ভবেশ রঞ্জন সাহা, অভিজিত ঘোষ, কলকাতার সুনীল ঘোষ, শম্ভু নাথ দত্তদের মতো কিছু মানুষ বছর আটেক আগে মিলিত ভাবে সমাজের জন্য কিছু করার ভাবনা থেকে গণবিবাহের সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের আসর হিসাবে বেছে নেন সিদ্ধপীঠ তারাপীঠকে। সেই থেকেই প্রতিবছর এই সময় গণ বিবাহ দিয়ে আসছেন তাঁরা। গণবিবাহ হলেও আয়োজকরা জাঁকজমকে খামতি রাখেননি। বিয়ের খরচ বহন করা ছাড়াও দম্পতিদের দেওয়া হয় সোনার কানের দুল, নাকছাবি ও টাসেল্ট। স্টিলের খাট, বিছানা, সাইকেল, স্টিলের আলমারি, দু’জনকে দেওয়া হয় হাতঘড়ি। এছাড়াও বেনারসি শাড়ি, প্রেসার কুকার ও দান সামগ্রী। এ ছাড়াও পাত্র-পাত্রী, দু’পক্ষের ৫০ জন আত্মীয়ের ভুরিভোজের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। ভুরিভোজে ছিল কচুরি, ডিমের ডেভিল, পোলাও, সাদা ভাত, খাসির মাংস, মিষ্টি, দই।

সুভাষবাবু বলেন, “আমরা অধিকাংশ মানুষ ব্যবসা করে উপার্জন করি। আমাদের সকলের হেঁসেখেলে দিন চলে যাচ্ছে। কিন্তু দেখলাম কিছু মানুষ টাকার অভাবে কন্যা সম্প্রদান করতে পারছেন না। সেই থেকেই আমাদের এই চিন্তাভাবনা। এভাবেই কিছু কন্যার যদি বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে কিছু পরিবারকে আমরা চিন্তামুক্ত করতে পারব। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই বিয়ের ব্যবস্থা করেছি”।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বিয়ের আগে উভয়ের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা হয়েছে। বিয়ের পর যাতে শারীরিক কোনো সমস্যা না হয়, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।পাত্রের হাতে মেয়েদের সম্প্রদান করতে পেরে খুশি কার্তিক রায়, শ্যামল মণ্ডল, ঋতু কোনাইরা। তারা বলেন, “আমরা দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ফলে খরচ করে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের ছিল না। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জয় মা তারা ভক্তবৃন্দের খবর পেয়ে আমরা যোগাযোগ করি। তারাই বিয়ের ব্যবস্থা করেন দেন। শুধু বিয়ে নয়, নতুন সংসার করতে যে সমস্ত সামগ্রী প্রয়োজন সবই দিয়েছেন তারা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *