আমাদের ভারত, ১৭ মার্চ: দীর্ঘ ১৮ বছর পর বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে যেতে বলা বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে আবার কলকাতায় ফেরানোর জন্য সাওয়াল করেছেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। আর তার জন্য তাঁকে একাধারে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা যেমন জানিয়েছেন লেখিকা, তেমনি সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁর কলকাতায় ফেরার ব্যাপারেও।
মৌলবাদের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত তিনি। ইসলাম ধর্মের একাধিক অন্ধকারময় দিকগুলি তুলে ধরে নিজের সাহিত্যের মাধ্যেমে প্রতিবাদী হতে দেখা গেছে তাঁকে। পর্দা প্রথার আড়ালে কট্টরপন্থার নগ্নরূপ প্রকাশ্যে এনে ধর্মের গোড়ামীতে আঘাত করেছেন তিনি। আর সেই কারণেই তাঁর সাহিত্য কর্মকে যেমন অবরুদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি তাঁর জীবনে নেমে এসেছে লাঞ্ছনা, অবমাননা ও বিতর্কের ঝড়। বাংলাদেশের টালমাটাল অবস্থা থেকে শুরু করে বঙ্গ রাজনীতিতে তিনি বেশ প্রাসঙ্গিক। কলকাতা শহর থেকে ২০০৭ -এ তাঁকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। কিন্তু আবার তসলিমা নাসরিনকে শহরে ফেরানোর জন্য তৎপর হয়েছেন বিজেপি সাংসদ। সোমবার রাজ্যসভায় তাঁকে ফেরানোর দাবি জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন শমীকবাবু। আর এর জন্য বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে পাল্টা পোস্ট করেছেন তসলিমা নাসরিন। তবে সংশয় প্রকাশ করেছেন আদৌ তাঁর কলকাতায় ফেরা হবে কি না তা নিয়ে।
যথাযথ অথবা উপযুক্ত নিরাপত্তা দিয়ে কলকাতায় তাসলিমা নাসরিনকে ফেরানোর দাবি তুলেছেন শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরেই বিজেপি সাংসদকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করেছেন তাসলিমা। তিনি লিখেছেন, “সাংসদ (কমিউনিস্ট পার্টি) গুরুদাস দাশগুপ্ত ২০০৭ সালে আমাকে নিয়ে প্রথম কথা বলেছিলেন ভারতের সংসদে। আমি তখন সবে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার দ্বারা বিতাড়িত পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বাংলার টানে, প্রাণের টানে যে শহরে বসবাস শুরু করেছিলাম, সেই শহর থেকে কখনো যে বিতাড়িত হতে হবে কল্পনাও করিনি। শ্রদ্ধেয় গুরুদাস দাশগুপ্ত প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি দাবি জানিয়েছিলেন, আমাকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে দেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘ বছর কোন রাজনীতিক আমার কলকাতায় ফেরা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। মাঝখানে আকাশ আট টিভি চ্যানেল থেকে সম্প্রচারিত হতে যাচ্ছিল “দুঃসহবাস” নামে আমার লেখা মেগা সিরিয়ালটি। তার সম্প্রচার বর্তমান সরকার বন্ধ করে দেয়। আজ আঠারো বছর পর সাংসদ (ভারতীয় জনতা পার্টি) শমীক ভট্টাচার্য আমাকে কলকাতায় ফেরানোর দাবি জানালেন সংসদে। জানি না কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কিনা, তবে তিনি যে আমার কথা মনে করেছেন, মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত আমি। বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিবেশে বাস করা আমার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ তা, তিনি উপলব্ধি করেছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
শমীক ভট্টাচার্যের দাবিকে মোটেই ভালোভাবে নেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পাল্টা জবাবে আক্রমণ শানিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে আইন শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিতে হবে, তারপরে অন্য সব। তিনি বলেন, যারা বলছেন তারা কি হিন্দু নাকি? সব ভেকধারি হিন্দু।” বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলেও তাসলিমাকে আশ্রয় না দেওয়ার পিছনে আইন শৃঙ্খলার অবনতির যুক্তি খাড়া করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। আজকের শাসক দল তৃণমূলের গলাতেও সেই একই সুর শোনা গেল। আর সেই আশঙ্কা আগে থেকেই আঁচ করে তাসলিমার ফেসবুক পোস্টেও তা ফুটে উঠল …”জানি না কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কিনা….”