আমাদের ভারত, ৩ জানুয়ারি: তিনি তৃণমূলের প্রথম সারির অন্যতম দাপুটে নেতা। বারবার জড়িয়ে পড়েন নানা বিতর্কেও। এরফলে তার নাম উঠে আসে সংবাদ শিরোনামেও। বার বার তার আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয় বিজেপি। সমালোচনার সময় বিজেপিকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়েন না তিনি। তিনি আর কেউ নন, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাকেই কিনা দেখা যাচ্ছে বিজেপির অন্যতম বড় মুখ যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে।
একাধিকবার দলের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিতর্কেও জড়িয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিরোধীতায় সামনের সারিতে থাকলেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পোস্ট করা একটি ছবি ঘিরে এখন গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একেবারে হাসিমুখে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথের হাতে।
হ্যাঁ তৃণমূলের সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও যোগী আদিত্যনাথের ছবি পোস্ট করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, “শোনা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এবং হিন্দু হৃদয় সম্রাট সম্মানীয় যোগী আদিত্যনাথজির সঙ্গে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুর এই ছবিটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নাকি তিনি প্রবল ভাবে মাননীয়ার বিরাগভাজন হয়েছেন। তাঁর আজকের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে তিনি তার দলে ঠিক কতটা কোণঠাসা।
সুকান্ত আরো লিখেছেন, “আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আজকে আমার সম্পর্কে করা কল্যাণবাবুর প্রলাপ তার ওপর তৈরি হওয়া প্রবল চাপের বহিঃপ্রকাশ। একদিকে পশ্চিমবঙ্গে তোষণ সর্বস্ব মুখ্যমন্ত্রীর চাপে ওয়াকফ বোর্ড নিয়ে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে মারপিট করতে হচ্ছে, মঞ্চে ফিরহাদবাবুদের সঙ্গে কমিউনাল বক্তব্য রাখতে হচ্ছে, আবার অন্যদিকে তিনি স্ব-ধর্মের প্রতি তাঁর দায়িত্বও উপেক্ষা করতে পারছেন না। তাই একপ্রকার অসহায় হয়ে তাকে দিনযাপন করা করতে হচ্ছে। তোষণের সংসারে আবদ্ধ থাকলেও দিনের শেষে তিনি দুর্গা মাতার সন্তান। আমি কায়মনো বাক্যে তাঁর মানসিক সুস্থতা কামনা করি।”
সম্প্রতি ওয়াকফ সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রক্তারক্তি কাণ্ড হয়েছিল। বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুমুল তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে মেজাজ হারিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বোতল ভেঙ্গে ফেলেন। আর ভাঙ্গা বোতলের টুকরো লেগে তার হাত কেটে যায়। তারপর সংবিধান দিবসের দিন সংসদ ভবনে তার আঙ্গুল কেমন রয়েছে তার খোঁজ নিয়েছেন খোদ-প্রধানমন্ত্রী এবং তাতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “এটাই সৌজন্য। একজন প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করছেন আঙুল কেমন আছে। নিঃসন্দেহ ভালো লাগে। মন ছুঁয়ে যায়। এতদিন পরে ওঁর মনে আছে। দল যাই হোক না কেন শাসক- বিরোধী যাই হোক না কেন, একজন এমপি আমি, উনি যে আমার খোঁজ নিয়েছেন এটা আমার কাছে বড় ব্যাপার।রাজনৈতিক সৌজন্যতার থেকে তো আর কিছু বড় হতে পারে না। আমার খবর নেওয়ায় আমি খুশি।” মোদীর পঞ্চমুখে প্রশংসা করা আর এরপর আবার লক্ষ্মৌ গিয়ে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করা সব মিলিয়ে অনেকেই গাণিতিক হিসেবে রাজনৈতিক রসায়ন বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন।