আমাদের ভারত, ২৯ মার্চ: গত দু’দিন ধরে আতঙ্কে রয়েছেন মোথাবাড়ির হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের দোকান, বাড়ি, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলেছে সেখানে। মোথাবাড়ির সেই হিন্দু নির্যাতিতদের সঙ্গে রবিবার দেখা করবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তার জন্য শনিবার রাতেই তিনি মালদায় পৌঁছে যান। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এই ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ঘটেছে। ভোট যত সামনে আসবে তত এই ধরনের ঘটনা ঘটবে।
সামনেই বিধানসভা নির্বাচন, তার আগে দাঙ্গা পরিস্থিতি মালদার মোথাবাড়িতে। এই পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃত বা পরিকল্পনা করে করা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের। তাঁর কথায়, ভোট ব্যাঙ্কের কথা ভেবে সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের দিকে টানতে এই ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ঘটানো হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে নামানো হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী। বিজেপির তরফে এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, নির্বাচনের আগে এই ধরনের ঘটনাগুলি রাজ্যে বেশি করে দেখতে পাবেন। আসলে ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতি চান। মোথাবাড়িতে হিন্দুদের উপর যে অত্যাচার চলছে সেখানে তো তৃণমূলের হিন্দু বা সিপিএমের হিন্দুরা আলাদা করে পার পাননি। সকলেই অত্যাচারী ও ভুক্তভোগী। কটাক্ষ করে সুকান্ত মজুমদার বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিহাদিদের হাতের কাঠপুতুল হয়ে গিয়েছেন।
মালদায় পৌঁছেই তাঁর হুঙ্কার, বিজেপি আক্রান্ত হিন্দুদের পাশে দাঁড়াবে কেউ আটকাতে পারবে না। ১৪৪ ধারা জারি করে আটকে রাখা যাবে না। তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনায় গতকাল রাতে প্রচুর হিন্দুদের বাড়ি থেকে হিন্দু ছেলেদের জানলা ভেঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনও এক দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা ঘটনার দিন সেখানে উপস্থিতি ছিল না। এই পুরো ঘটনাটা ঘটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। ডিজি রাজীব কুমার এই পুরো ঘটনা এখানকার এসপি এবং ডিএমকে দিয়ে করাচ্ছেন।
সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, আধা সামরিক বাহিনীকে আনা হলেও তাদের বসিয়ে রেখে এরিয়া ডোমিনেশনের কাজ করছে রাজ্য পুলিশ। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কেন সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না? তার উত্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। ওরা চায় দাঙ্গা হোক।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমি আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলাম এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। ভোট যত এগিয়ে আসবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা রাজ্যজুড়ে তত এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে তাঁর লোকেদেরকে দিয়ে। কারণ অঙ্ক অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট সম্পূর্ণভাবে পোলারাইজেশন করা সম্ভব যা হিন্দু ভোটে সম্ভব নয়। মুসলিমদের ভয় দেখিয়ে তাদের ভোট পকেটে ভরার জন্য এই ধরনের বহু ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নিজেদের লোকেদের দিয়ে করাবেন।”
রাম নবমীতে ঝামেলা প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এবার ডবল ডোজ দেব, যদি রাম নবমীর মিছিলে কোনো হামলা হয়। তিনি বলেন, “গতবার হাওড়ার রিষড়া এবং উত্তরবঙ্গের ডালখোলাতে রাম নবমীর মিছিলের ওপরে হামলা হয়েছিল। রাজ্য সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তীতে বিজেপি আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং এনআইএ তদন্ত হয়। তারপর বেশ কিছু জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবার যদি কেউ ঢিল মারে পাটকেল খাবে সেদিনই। আবার পরে এনআইএ নিয়ে গিয়ে তদন্ত হবে, এবার ডবল ডবল ভোজ দেব।”
তিনি বলেন, পুলিশ ভয় পাচ্ছে হিন্দুরা যেহেতু একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করছে। মোথাবাড়িতে এই সাংঘাতিক ঘটনার পরেও সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দুরা পথে নেমেছে, প্রতিবাদ করেছে। বিজেপি কর্মী ও নেতারা পথে নেমেছে, পুলিশের চোখে চোখ রেখে আমাদের বিধায়ক, জেলা সভাপতিরা লড়াই করছে। এসব দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝেছেন, রামনবমী বা হিন্দুদের যে সমস্ত শক্তি প্রদর্শনের অনুষ্ঠান রয়েছে সেই অনুষ্ঠান যদি বানচাল করা না যায় তাহলে হিন্দুরা আরো বেশি একত্রিত হবে। হিন্দুরা যাতে একত্রিত না হয় তাই এই চক্রান্ত করা হচ্ছে।
মোথিবাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রসঙ্গে, তিনি জানান, “হিন্দুদের জীবন মরণাপন্ন হয়ে যাচ্ছিল, তাই বাধ্য হয়ে আমি অমিত শাহর মন্ত্রক এবং রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলি।”