Tarapith রাস্তায় ছিনতাই বাড়ছে, তাই তারাপীঠের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ রাতে, ক্ষোভ সর্বস্তরে

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১৭ মার্চ: রাতে এলাকায় ছিনতাই, রাহাজানি বাড়ছে। তাই তারাপীঠে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যাতায়াত বন্ধ করে দিল বীরভূমের দুই থানার পুলিশ। ফলে সমস্যায় পড়েছেন পুণ্যার্থী থেকে এলাকার বাসিন্দারা। এই ঘটনাকে পুলিশের ব্যর্থতা বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা। এনিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ বর্তমানে বাংলা ছাড়িয়ে দেশের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুণ্যার্থীরা প্রতিদিন ট্রেনের পাশাপাশি সড়ক পথে শয়ে শয়ে গাড়িতে চড়ে তারাপীঠে আসেন। সাধারণত, কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, বর্ধমান জেলার পুণ্যার্থীরা রানীগঞ্জ-মোড়গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে তারাপীঠে পৌঁছন। তাদের তারাপীঠে পৌঁছনোর দুটি সহজ রাস্তা রয়েছে। একটি মল্লারপুর থানার আম্বা মোড় থেকে আটলা গ্রাম হয়ে তারাপীঠ। আরেকটি রামপুরহাট থানার চাকপাড়া মোড় থেকে তারাপীঠ। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই এই দুটি রাস্তায় ছিনতাই, রাহাজানি বেড়ে চলেছে। বহুবার টহল দিয়েও ছিনতাইবাজদের ধরতে পারছে না পুলিশ। তাই এবার রাতের দিকে ওই দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিয়ে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে রামপুরহাট ও মল্লারপুর থানার পুলিশ।

রীতিমতো গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড করে বন্ধ রাখা হয়েছে দুটি রাস্তা। এর ফলে যানবাহন নিয়ে তারাপীঠ মন্দিরে পৌঁছতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে পুণ্যার্থীদের। দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে তারাপীঠে পৌঁছতে হচ্ছে পুণ্যার্থীদের। দীর্ঘ ছ’মাস ধরে চলছে এই প্রতিবন্ধকতা। এর ফলে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারাও।

তারাপীঠ সংলগ্ন আটলা মোড়ে কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ার রাজকুমার মণ্ডল বলেন, “বড় সাহেবের নির্দেশ। রাতে এই রাস্তা দিয়ে কোনও যানবাহন যেতে দেওয়া হয় না। কারন এই রাস্তায় রাতে ছিনতাই হয়। বড় সাহেবের নির্দেশ আমরা পালন করছি।”

আটলা মোড় থেকে চার কিলোমিটার এগিয়ে যেতে একই অবস্থা। বামদেবের জন্মস্থান আটলা গ্রাম পেরিয়ে একই কায়দায় গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা ব্যারিকেড করে রেখেছে মল্লারপুর থানার পুলিশ। সেখানেও রয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার। পাশেই পুলিশের ভ্যানে বসে রয়েছেন খাঁকি উর্দিধারী পুলিশ কর্মী বলরাম লেট। তিনি বলেন, “এই রাস্তায় চুরি ছিনতাই হয়। তাই মল্লারপুর থানার বড়বাবুর নির্দেশে রাত্রিবেলায় এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।”

বিরোধীদের অভিযোগ পুলিশ ছিনতাইবাজদের ধরতে ব্যর্থ। তাই পুণ্যার্থীদের আটকাচ্ছে। সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সঞ্জীব মল্লিক বলেন, সন্ধ্যা নামলেই মল্লারপুরের আম্বা মোড় দিয়ে শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে হাজার হাজার ওভারলোড লরি যাতায়াত করে। রাতভর টাকা নিয়ে সেই লরি যাতায়াতের সুবিধা করে দেয় পুলিশ। তাই সেই সময়কালে ওই রাস্তা দিয়ে কোনও ছোট যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয় না। আর ছিনতাই হলে দুষ্কৃতীদের ধরা তো পুলিশের কাজ। সেটা না করে পুণ্যার্থীদের আটকাচ্ছে। এর মানে পুলিশ গৃহস্থকে সতর্ক থাকতে বলে দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে।”

বিজেপি নেতা অষ্টম মণ্ডল বলেন, “এই এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে রাত্রে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে জেলা পুলিশ সুপারের নজরে এনেছিলাম। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। পুলিশ সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাই পুণ্যার্থীদের হয়রানি করাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় মানুষদেরও বাধা দেয় পুলিশ।”

বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি তাঁর জানা নেই। যদি এইরকম হয়ে থাকে তাহলে তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন”।

মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দ সিকদার বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে ওই রাস্তায় রাত্রে নাকা চেকিং করা হয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *