আমাদের ভারত, সন্দেশখালি, ১২ ফেব্রুয়ারি:
কেরলের সফর কাটছাঁট করে বাংলায় ফিরেই আজ সন্দেশখালি পৌছন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিন প্রথমে তিনি ধামাখালিতে পৌঁছন। সেখান থেকে লঞ্চে সন্দেশখালি যান, গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। শোনেন গ্রামের মহিলাদের উপর দিনের পর দিন হয়ে চলা অত্যাচারের কথা। মহিলাদের কাতর প্রার্থনা, “আমাদের বাঁচান। আপনারা চলে গেলে, আর ওরা গ্রেফতার না হলে আমাদের মুখ তুলে তাকানোর অবস্থা থাকবে না।”
রাজ্যপালের কাছে নিজেদের দুর্দশার কথা জানান সন্দেশখালির মহিলারা। আতঙ্কিত মহিলাদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশের উপর তাদের ভরসা নেই। সন্দেশখালিতে পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। তাই সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় পুলিশের দাবি জানান গ্রামের মানুষ। আজ কাতর আবেদন নিয়ে রাজ্যপালের পায়ের কাছে পড়ে যান মহিলারা। রাজ্যপালের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কীভাবে রাতের পর রাত তাদের ডেকে পাঠানো হতো, কিভাবে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মুখ বুজিয়ে রাখা হতো। কীভাবে পরিবারে ক্ষতি করা হবে সেই ভয় দেখানো হতো। সবটাই রাজ্যপালের সামনে তুলে ধরেন তারা। একইসঙ্গে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, পুলিশ কোনও রকম অভিযোগ নেয় না বলেও রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেন স্থানীয় মহিলারা। অত্যাচারিত মহিলারা জানান, “ওদের না ধরলে আপনারা চলে গেলে আমাদের অবস্থা আরো ভয়ংকর হবে। এরপর মুখ তুলে তাকাতে পারবো না। তেরো বছর ধরে যা অত্যাচার হচ্ছে তার থেকেও ভয়ঙ্কর হবে ওরা যদি ফিরে আসে।”
অন্যদিকে ত্রিমোহিনী বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় রাজ্যপালের কাছে নিজেদের অভাব অভিযোগ জানান সেই গ্রামের মহিলারাও। শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী করেন তাঁরা। শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের ফাঁসির দাবি জানান গ্রামের মহিলারা। থানার ওসি এবং অন্যান্য আধিকারিকদের দ্রুত বদলি করারও দাবি জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ। গ্রামের মহিলাদের আশঙ্কা, শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা গ্রেপ্তার না হলে পরবর্তীতে তাদের অত্যাচার আরো বাড়বে।
সকল গ্রামবাসীদের আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তা দেন রাজ্যপাল। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এটি মা কালীর মাটি, দুর্গা মায়ের মাটি, এখানে সমস্ত নারী নিরাপত্তা পাবেন।
রাজ্যপাল সন্দেশখালি মহিলাদের বলেন, “আমি কথা দিচ্ছি, যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার যা ক্ষমতা আছে তা দিয়ে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এদিন সন্দেশখালি যাওয়ার পথে একাধিকবার বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল। রাস্তায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন মানুষ। দেখা যায়, মিনাখায় এই বিক্ষোভের জেরে বেশ কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকে রাজ্যপালের গাড়ি। নিজে গাড়ি থেকে নেমে কথা বলেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। সরবেড়িয়া, ধামাখালি পর্যন্ত একাধিক জায়গায় এই একই ছবি দেখা যায়।
একই সঙ্গে রাজ্যপাল যাওয়ার পথে সংবাদ মাধ্যমকে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি রাজ্যপালের নজরে আসতেই হস্তক্ষেপ করেন তিনি। তাঁর নির্দেশে সংবাদ মাধ্যমকে ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।