আমাদের ভারত, ৯ ফেব্রুয়ারি: সংস্কার ভারতী আয়োজিত অখিল ভারতীয় কলাসাধক সঙ্গম অনুষ্ঠিত হয় ব্যাঙ্গালুরুর আর্ট অফ লিভিং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে। গত ১-৪ ফেব্রুয়ারি চারদিনের অনুষ্ঠানে সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত থেকে ৩৫ জন শিল্পী, কার্যকর্তা অংশগ্রহণ করেন। বর্ণময় এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে। প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন শ্রী য়াধুভিরা কৃষ্ণ দত্তা সমারাজা ওয়াদিয়ার। উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী মনজাম্মা জোগাথী, ড: শ্রী বিক্রম সম্পত, পণ্ডিত শ্রী রবীন্দ্র য়াভাগাল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শ্রী কৃষ্ণ দেব রায়া, সংস্কার ভারতীর সভাপতি শ্রী বাসুদেব কামাথ, শ্রী কে. সুচিন্দ্র প্রসাদ। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় পূর্বোত্তর লোকনৃত্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে।
এবছর কলাসাধক সঙ্গমের বিষয় ছিল “সামাজিক সমরসতা”। সংস্কার ভারতী দেশজুড়ে যে আটটি বিধা নিয়ে কাজ করে তার সফল প্রয়োগ দেখা গেল এই প্রথম। সমস্ত বিধার মাধ্যমে সমরসতা প্রতিফলিত হয়। যা এক কথায় অনন্য। সব চেয়ে আনন্দের বিষয় এই প্রথম দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত সমস্ত বিধায় অংশগ্রহণ করে বাংলা সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটাতে পারল অখিল ভারতীয় স্তরে।
ভূ- অলংকরণ বিধা আয়োজিত প্রদর্শনীতে বাংলার ঐতিহ্যবাহী আলপনা ও রাবীন্দ্রিক আলপনার সফল প্রয়োগ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি রঙ্গোলী পোট্রেট এ বাংলার দুই মনীষী চৈতন্য মহাপ্রভু ও স্বামী বিবেকানন্দ স্থান পায়। চিত্রকলা বিধা আয়োজিত প্রদর্শনীতে বাংলার শিল্পী শীর্ষ আচার্য’র আঁকা চিত্র – শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর “নগর সংকীর্তন” দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। যেখানে চার বর্ণ এক সঙ্গে পঞ্চ তত্ত্বের সঙ্গে সংকীর্তনে মাতোয়ারা। প্রাচীনকলা বিধা আয়োজিত প্রদর্শনীতে সারা দেশে মন্দির ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর মধ্যে সমরসতা প্রতিভাত হয় এমন তথ্য বিবরণ সম্বলিত দুর্লভ ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। সেই প্রদর্শনীতে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মন্দিরগাত্রের স্থাপত্যশৈলী স্থান পেয়েছে।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে এবছর থেকে সংস্কার ভারতী ‘ভরতমুনি কলা সম্মানে’র শুভারম্ভ করল। এবছর সর্ব ভারতীয় স্তরে এই সম্মানের জন্য লোককলা ও চিত্রকলা বিভাগের দুই কলা সাধককে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। কলাপূজন শক্তি ও আধ্যাত্মিক চেতনায় পরিপূর্ণ মুম্বাই -এর প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী তথা কলা গুরু শ্রী বিজয় অচরেকর এবং লোককলা শিল্পী শ্রী সখারাম গণপত মসগে মহাশয়কে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরসংঘচালক পূজনীয় শ্রী মোহন ভাগবতজী ‘ভরতমুনিসম্মান ২০২৩’ প্রদান করেন। ঐ অনুষ্ঠানে ডঃ মোহনজী ভাগবত বলেন, ‘সংস্কার ভারতী কলা ক্ষেত্রে সর্ব বৃহৎ সংগঠন হবেই। হয়েওছে। আমরা প্রধান হব। ভারতীয় কলা জগতে আমাদের ধ্যেয়বাদের দ্বারা কলা সংস্কারের কাজ করতে হবে।’
সঙ্গীতবিধা আয়োজিত সমরসতা সমবেত গীতে পশ্চিমবঙ্গের জয় জয়কার। কলাসাধক সঙ্গমের তৃতীয় দিনে প্রথম সত্রের উদ্বোধন হয় সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের শিল্পীদের সমবেত ভাবসঙ্গীতের মাধ্যমে। তখন দর্শক আসনে উপবিষ্ট রয়েছেন পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘচালক ডঃ মোহন ভাগবতজী। পাশাপাশি সান্ধ্যকালীন সত্রে দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সঙ্গীত শিল্পীদের পরিচালনায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের “ধনধান্য পুষ্পভরা” সমবেত সঙ্গীতটি বহু ভাষায় পরিবেশিত হয়। সমবেত সঙ্গীতে উত্তরবঙ্গ ও ত্রিপুরা প্রান্ত মিলে মোট ৫৫ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা ডক্টরজীর প্রিয় গান দর্শক আসন থেকে শুনছেন ডঃ মোহন জী ভাগবত, গুরু রবিশঙ্কর জী, শ্রী বাসুদেব কামাথজী। ওনারা হাতে তাল দিয়ে দিয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। এ এক পরম প্রাপ্তি বঙ্গভূমির শিল্পীদের জন্য।
লোককলা বিধার আয়োজনে বাংলার পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘রামায়ণের পালা’, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও সমরসতা বিষয়ক বোধকথা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেখানেও বাংলার লেখকের রচনা স্থান পায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমরসতা বিষয়ক কবিতা রচনা ক’রে দেশের বাছাই করা মাত্র ৯জন শিল্পী কবি সম্মেলনে স্থান পায়। তারমধ্যে দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের কবি সঙ্ঘমিত্রা কবিরাজ রচিত কবিতা স্থান পায় কবি সম্মেলনে। ঐতিহাসিক মঞ্চে বাংলার কবির কবিতাপাঠ সকলকে আনন্দ দান করে।
বাংলার বিশিষ্ট নাট্যকার তপন গাঙ্গুলীর লেখা ‘সমরসতা’ বিষয়ক নাটক “সমতা” গ্রহণ করেছে অখিল ভারতীয় নাট্যবিধা। শর্ট ফিল্ম, নৃত্যবিধায় অংশগ্রহণ করে বাংলা। সমরসতা শোভাযাত্রায় বাংলার চৈতন্য মহাপ্রভুর চিত্রপট নিয়ে নগর সংকীর্তনে মেতে ওঠে বাংলার শিল্পীরা। কপালে তিলক, গলায় তুলসীর মালা, হাতে করতাল। মুখে হরে কৃষ্ণ নাম। হরিনামে মাতোয়ারা শ্রী শ্রী রবিশঙ্করজী’র আশ্রম।
সমাপন সমারোহে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করজী, পূজনীয় সরসঙ্ঘচালক মোহনজী, রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ বাসুদেব কামাথজী উপস্থিত ছিলেন। পরম পুজনীয় ডঃ মোহন ভাগবতজী বলেন, “আমরা সব সময় ভাববো, সংস্কার ভারতী আমার নিজের সংগঠন। এই সংগঠন চলবে অনুশাসন ও সত্যের উপর। আমরা এমন গুণের অধিকারী হবো যে আমাদের দেখে সমাজের বিভিন্ন স্তরের শিল্পীরা সংগঠনে জুড়তে আগ্রহী হবে।”
কলাসাধক সঙ্গমের ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে বাংলার মনীষী শ্রীচৈতন্য দেব, স্বামী বিবেকানন্দ সহ বহু মনীষীর সমরসতামূলক বাণী বাংলা ক্যালিগ্রাফিতে লেখা হয়। এবং যা প্রদর্শনী তে স্থান পায়।
এবছরই প্রথম অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত কাজ অনলাইনে করা হয়। তা অনেকাংশেই সফল। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা অভিনব। সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, “সারা দেশের সনাতন ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন হ’ল সংস্কার ভারতীর কলাসাধক সঙ্গম।পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের শিল্পী দের অংশ গ্রহনে গর্বিত
আমরা।” অনুষ্ঠান চলে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সেমিনার সহ প্রতিদিন ছিল বিভিন্ন প্রদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সারা ভারত থেকে প্রায় ১৬০০ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন এই কলাসাধক সঙ্গমে।
Pingback: Sanskar Bharti, সংস্কার ভারতীর অখিল ভারতীয় কলাসাধক সঙ্গম, বেঙ্গালুরুতে পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের জয় জয়কার