মিলন খামারিয়া, আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৯ জুন: বর্তমানে প্রহসন, যাকে আমরা স্ট্যান্ড-আপ কমেডি বলে জানি, তা নতুন ভাবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করেছে, যার দ্বারা নবীন প্রজন্ম বিশেষভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে। চিন্তার কারণ এই যে, সামাজিক মাধ্যমে যখন এই কমেডিগুলি প্রচার করা হচ্ছে তখন তার গুণগত মান খুবই খারাপ হচ্ছে।
নাটক লোকশিক্ষার একটি মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে নাটকে, সিনেমায় বা অন্যান্য শিল্পে এমন কিছু সংলাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে যা রুচিশীলতার গণ্ডিকে অতিক্রম করছে। হাস্যরসের বিষয়বস্তুতে জাতি ধর্মের প্রতি, জাতীয় মূল্যবোধের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ পাচ্ছে। শিল্পীর স্বাধীনতার নামে অভিনেতা- অভিনেত্রীরা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য ধর্মীয় প্রতীককে উপহাস করছেন, রাষ্ট্রীয় নায়কদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করছেন, পারম্পরিক সামাজিক প্রথাকে ব্যঙ্গ করছেন। কুরুচিকর অঙ্গভঙ্গির দ্বারা যুবসমাজকে আকৃষ্ট করে সংবেদনশীলতা, সহিষ্ণুতা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধেকে নষ্ট ক’রে দেওয়া হচ্ছে।
ভারতের নাট্যপরম্পরা বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সমৃদ্ধতম পরম্পরা, যার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্রে। এই নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত রস, ভাব, তত্ত্ব – যা কেবলমাত্র মনোরঞ্জন নয়, লোকশিক্ষারও অঙ্গ। এই রসবোধ নব রসে বিভক্ত। যার মধ্যে, হাস্যরস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে।
ভারতীয় তথা সংস্কৃত নাটকে, কাব্যে এই হাস্যরস সামাজিক চেতনা, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তামাশা, যাত্রা, সং, ভাঁড়, নৌটঙ্কি ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক লোক ঐতিহ্য। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের লোকনাট্যে এই সকল ধরণের হাস্যরসের প্রতিফলন, সংলাপের প্রয়োগ সর্বসাধারণের সংস্কারকে অনুপ্রাণিত করেছে, সমৃদ্ধ করেছে।
আজ রবিবার, কলকাতার বাগবাজারের গৌড়ীয় মঠে অনুষ্ঠিত হলো ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’-এর ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা। সেই সভায় সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের কার্যকরী সমিতি এই হানিকর হাস্যরস চর্চার জন্য বিশেষ চিন্তা ব্যক্ত করেছে। কার্যকারিণী সমিতি বিশ্বাস করে যে, এখনই সঠিক সময়, পরম্পরা গত হাস্যরসকে আধুনিক যুগোপযোগী প্রেক্ষাপটে রেখে সংবেদনশীল ও সাংস্কৃতিক গরিমা সমৃদ্ধ একটি মাধ্যম হিসেবে প্রয়োগ করার।
সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের কার্যকরী সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, নাটকের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ও দর্শকের মাঝে এক এমন সুস্থ সংলাপের আদান- প্রদান হোক, যার দ্বারা হাস্যরস ও রুচিশীলতার সামঞ্জস্য থাকবে।
সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, সংস্কার ভারতী সকল শিল্পী, দর্শক, প্রশাসনিক নিয়ম নির্ধারকদের প্রতি আবেদন জানাচ্ছে, এই বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য। শিল্পী, রচনাকারদের প্রতি আবেদন করছে যে, তারা যেন নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। তাঁর আবেদন, সঠিক বিবেক সমৃদ্ধ হাস্যরসকে উৎসাহ প্রদান করুন এবং কুরুচিপূর্ণ অনৈতিক হাস্যরসকে প্রত্যাখান করুন।
সরকারি নীতি নির্ধারক সংস্থা এবং সাংস্কৃতিক সংস্থার কাছে আবেদন রেখেছে সংস্কার ভারতী, এই হাস্যরসকে সঠিক দিশা প্রদান করার জন্য তারা যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা করেন এবং এই আদর্শের লঙ্ঘনকারীকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রদান করেন; যাতে এই হাস্যরসের মান অক্ষুন্ন রাখা যায়। সমগ্র দেশে সংস্কার ভারতীর সঙ্গে যুক্ত শিল্পী এবং কার্যকর্তাদের দেশজুড়ে সক্রিয়, সংবেদনশীল ভূমিকা পালন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভারতীয় মূল্যবোধ, মর্যাদা এবং সুস্থ সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে হাস্যরস বিকশিত হতে পারে।
ইজেড সিসির অধিকর্তা আশিস গিরি বলেন, আমাদের রাজ্যের কিছু কিছু শিল্পকে মর্যাদা দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে, তার মধ্যে অন্যতম হল কীর্তন। কীর্তনের মানে হল কীর্তির গুণগান করা। কীর্তনের সৃষ্টি হাজার হাজার বছর আগে। নারদ, ব্রহ্মা- বিষ্ণুর যেভাবে গুণগান করতেন তাকেই বলা হতো কীর্তন। আর মন্দিরে ভগবানের সামনে যা করা হয় তা হল প্রবন্ধ সঙ্গীত। সেই কীর্তনকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে।
২০২৫ সাল কালজয়ী ‘বন্দেমাতরম সঙ্গীত’ রচনার সার্ধশতবর্ষ। এই সঙ্গীত সারা ভারতের বিপ্লবীদের আলোড়িত করেছিল। এই সঙ্গীতের তাৎপর্য প্রচারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের সংস্কৃতি পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টায় এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধের অনুভূতি জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে সারা বছর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রা অনুষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে যাত্রা শিল্পীদের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদান করার জন্যও প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।