আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ৯ ফেব্রুয়ারি: লক্ষ্য স্বচ্ছ ভারত, বিশ্ব শান্তি। এই লক্ষ্যে আসুমুদ্র হিমাচল পাড়ি দিয়েছেন ৫৯ বছরের রাধাকৃষ্ণণ ভারতী। দেশের সমস্ত ধর্মীয় স্থান পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাওয়ার ইচ্ছে। রয়েছে পাকিস্তানের হিংলাজ, বাংলাদেশের যশোরেশ্বরী থেকে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই ইচ্ছা পূরণ হওয়া নিয়ে সন্দিহান রাধাকৃষ্ণণ।
১৯৬৬ সালের ২৯ মার্চ ব্যাঙ্গালোরে জন্ম রাধাকৃষ্ণণ ভারতীর। বাবা ভারতীয় জীবন বীমার অফিসার ছিলেন। ফলে সেখানেই পড়াশোনা শেষ করে সফটওয়্যার কোম্পানির পদাধিকারী হিসাবে কাজে যোগদান করেন। আগেই মারা যান মা। ২০১৫ সালে ৯২ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ব্যাঙ্গালর ছাড়েন তিনি। সাঁইবাবার দীক্ষিত হয়ে মহারাষ্ট্রের সিরিডি চলে যান। সেখানেই সন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন। সেখান থেকেই দেশের মধ্যে থাকা ধর্মীয় স্থান দর্শনের নেশা চেপে যায়। ২০১৫ সালে প্রথমে পায়ে হেঁটে ৫৩ দিনে ৬৭৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সিরিডি থেকে পৌঁছে যান গুজরাটের গিরনার। এরপরেই এক বছরে দক্ষিণ ভারতের রামেশ্বরম, গুজরাটের দ্বারকা, বদ্রিনাথ, পুরী ভ্রমণ করেন।
২০২০ সালের জুন মাসে সাইকেলে ভারত ভ্রমণ শুরু করেন রাধাকৃষ্ণণ ভারতী। দু’মাসে ব্যাঙ্গালোর থেকে অমরনাথ ভ্রমণ করেন। কিন্তু অমরনাথ বন্ধ থাকায় বৈষ্ণবদেবী দর্শন করেন। করোনা অতিমারির সময় গোটা যাত্রা পথে তাঁকে মুখোমুখি হতে হয়েছে অজস্র বিপদের। কোথাও পুলিশের চোখ রাঙানি, কোথাও গেরুয়া পোশাক দেখে ধর্মীয় মেরুকরণের বাধা। ২০২১ সালে রামেশ্বরম থেকে অযোধ্যা পাড়ি দেন। এই সময় রামচন্দ্রের বনবাসেরর যাত্রাপথ ধরে ২৪৯টি রাম মন্দির দর্শন করেন। সেখানকার মাটি নিয়ে এসে অযোধ্যার মন্দির নির্মাণে কাজে লাগান। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় বন্য পশুরাও তাঁকে একাধিকবার তাড়া করে। কিন্তু ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। তাই বিপদের মুখে পড়েও নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন রাধাকৃষ্ণণ। এই পর্যায়ে তাঁর সময় লাগে ১৬ মাস।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ১০৮ শক্তিপীঠ দর্শনে বেরিয়ে পড়েন সাইকেল নিয়ে। ইতিমধ্যে ১২ জ্যোতিলিঙ্গ দর্শন করে ফেলেছেন রাধাকৃষ্ণণ। বর্তমানে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, জম্মু কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, নেপাল, বিহার, ঝাড়খণ্ড ঘুরে রাধাকৃষ্ণণ পউছেছেন বাংলার বীরভূম জেলার রামপুরহাটে। প্রথমে ৫১ পীঠ নলাটেশ্বরী মন্দির দর্শনের পর পৌঁছে যান তারাপীঠে। সেখানে মা তারার দর্শন করেন। এরপর বাংলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ধর্মীয় স্থানে পৌঁছে যাবেন তিনি।
রাধাকৃষ্ণণ বলেন, “আমরা বিদেশে ঘুরতে যায় মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে। কিন্তু দেশে হিন্দুদের যা ধর্মীয়স্থান রয়েছে সেগুলি সারা জীবনে দর্শন করা যাবে না। যেটুকু যায়, সেটুকু দর্শন করলে সেই সমস্ত মন্দির এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ফিরবে। তবে আমার মূল লক্ষ্য স্বচ্ছ ভারত, বিশ্ব শান্তি। সেই বার্তা নিয়েই ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ করে চলেছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলে স্বচ্ছতার বার্তা দিচ্ছি। আর মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বিশ্বের শান্তি কামনা করছি। এই সাইকেল থামবে না, যতদিন দেহে আছে প্রাণ”।