Swadighi Canal, Deputation, বর্ষার আগে সোয়াদিঘি খালের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সহ ৫ দফা দাবি, জেলা শাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ৭ ফেব্রুয়ারি: তমলুক মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ নিকাশী সোয়াদিঘি খাল সেচ দপ্তরের পূর্বের কাটিং চার্ট অনুসারে আগামী বর্ষার পূর্বে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সহ ৫ দফা দাবিতে আজ জেলা শাসকের দপ্তরে প্রায় ৫ শতাধিক ভুক্তভোগী বানভাসি মানুষ বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন কর্মসূচিতে সামিল হন। বিকাল ৩টেয় নিমতৌড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি মিছিল জেলা শাসকের অফিসের দিকে যায়। এরপর অফিস চত্বরে এক বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির উপদেষ্টা ও সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক। পরে তাঁর নেতৃত্বের ৬ জনের এক প্রতিনিধি দল জেলা শাসকের অনুপস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সচিব সৌম্য চট্টোপাধ্যায় ও সেচ দপ্তরের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত সরকারের কাছে ডেপুটেশন ও স্মারকলিপি দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন মধুসূদন বেরা, সন্তোষ মাইতি, নিবাস মানিক, অশোক মাইতি প্রমুখ। পরে ওই প্রতিনিধি দল তমলুকের এসডিও’র সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রায় ২১ কিমি দীর্ঘ এই খাল কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশে বর্ষার জলনিকাশীর একমাত্র মাধ্যম। এছাড়াও রূপনারায়ণ নদের জোয়ারের জল বোরো মরশুমে ওই খালের মাধ্যমে উপরোক্ত ব্লকগুলির বিরাট অংশের চাষযোগ্য জমিতে ধান, পান, ফুল ও মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলের যোগান দেয়। ওই খালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কামিনা, জঁফুলি ও মুড়াইল খাল নামে আরো
৩টি শাখা খাল। দীর্ঘ ১২ বছর ওই সমস্ত নিকাশী খালগুলি সংস্কার না হওয়ার বিগত চার/পাঁচ বছর এলাকায় বর্ষার সময় প্রায় ৪০-৫০টি গ্রামের কয়েকশো হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ নষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল পান ও ফুলচাষ এবং গ্রামীণ রাস্তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কার্যত ওই কয়েক মাস এই বিরাট অংশের ছাত্র-ছাত্রী সহ সর্বস্তরের হাজার-হাজার মানুষজনদের স্বাভাবিক জনজীবন নানাভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

১৯৮৪ সাল থেকে এলাকার কৃষক সহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনসাধারণ “সোয়াদিঘি খাল সংস্কার সমিতি” নামে এই সংগঠনটি গড়ে তুলে রাজ্য, জেলা ও ব্লকস্তরের সেচ ও প্রশাসনিক দপ্তরগুলিতে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন পরিচালনা করছেন। একাধিকবার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা ভোগপুরে রেল ও রামতারকে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। সর্বশেষ রামতারকে জাতীয় সড়ক অবরোধে তমলুক থানার পুলিশ বানভাসিদের অনেকের নামে এফআইআর করে। তা সত্বেও এলাকার মানুষজন জীবন-জীবিকার স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত ৩ অক্টোবর, ২০২৪ ওই খাল সংস্কারের দাবিতে এলাকার ৫ শতাধিক বানভাসি মানুষ তমলুকের সেচ দপ্তরের অফিসে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশনের কর্মসূচিতে সামিল হন। ফলস্বরূপ মজে যাওয়া খালটি জেলা শাসক, অতিরিক্ত জেলা শাসক(উন্নয়ন), মহকুমা শাসক, সেচ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রমুখরা পরিদর্শন করেন। এরপর জেলা শাসক দপ্তরের কনফারেন্স হলে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে রাজ্য সরকারের খনিজ দপ্তরের WBMDTCL(ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড) সংস্থার মাধ্যমে ‘পালিত ব্রিক ফিল্ড’ নামে এক এজেন্সিকে দিয়ে খালটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে বলে জেলা শাসক ঘোষণা করেন। আমরা ওই সভায় প্রস্তাব দিয়েছিলাম, খাল সংস্কারের পূর্বে সেচ দপ্তরের খালের পূর্ণাঙ্গ জায়গা জরিপ করে চিহ্নিত করে দিতে হবে। অনেক টালবাহানার পর সম্প্রতি খাল সংস্কারের সেই কাজ শুরু হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ থেকে খালটি সংস্কারের কথা থাকলেও তারপর প্রায় তিন মাস হতে চলল-এখনো একশো মিটার খালও সংস্কার হয়নি। সংস্কারের শুরু থেকেই সোয়াদিঘি লকগেট পার্শ্ববর্তী কাখর্দা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু জায়গায় খালের ভেতরে থাকা একদল জবরদখলকারী ও তাদের সমর্থকরা সংস্কারের কাজে পদে-পদে বাধা সৃষ্টি করছে। এছাড়াও খালের ভেতরে থাকা বনসৃজনের গাছগুলিও এখনো কাটা হয়নি, যে কারণে খাল সংস্কারের মেশিন ঠিকমত কাজ করতে পারছে না। যে কারণে ঠিকাদারের লোকজন মাঝে-মধ্যে সংস্কার কাজ বন্ধ রেখে মেশিনপত্র তুলে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন ঝামেলায় জড়াতে না চেয়ে খালের ভেতরের অবৈধ কাঠামোগুলি সরানোর ব্যবস্থা না করে, যেখানে যতটুকু সংস্কার করা যায় ততটুকুই খাল কেটে যাওয়াতে এজেন্সিকে বাধ্য করছেন।

সমিতির নেতৃবৃন্দের ধারণা, এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী বর্ষার পূর্বে আদৌ খালটি সংস্কার হবে কিনা সন্দেহ। এর জেরে ফের ওই বিরাট এলাকা জলবন্দি হবে। নষ্ট হবে কোটি কোটি টাকার সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পদ। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হবে ও চার/পাঁচ মাস ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা শিকেয় উঠবে। তাদের
দাবিগুলি হলো-

১) আগামী বর্ষার পূর্বেই সেচ দপ্তরের গত ২০১১ সালের কাটিং চার্ট অনুসারে খালটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করতে হবে।
২) খালের ভেতরে থাকা বনসৃজনের গাছগুলি অতি দ্রুত কেটে নেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে।
৩) আগামী বর্ষার পূর্বেই লকগেট তোলা-ফেলার জন্য বৈদ্যুতিকীকরনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
৪) উক্ত কাজে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ব্লক ও অঞ্চলভিত্তিক তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে।
৫) খালের ভেতরে থাকা পি.এইচ.ই.র পাইপ নিয়ে যাওয়ার জন্য কাঠামোগুলিকে বাঁধ বরাবর নির্মিত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *