Bjp কেবল ভাতার রাজনীতিই কি সবুজ ঝড়ের কারণ? নাকি এই ফলাফলের জন্য বিজেপির রাজনৈতিক ভূমিকাও দায়ী

শ্রীরূপা চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ৫ জুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা যায় ঝড় উঠেছে, মানুষ ভাতার রাজনীতিকে বিশ্বাস করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ লক্ষ্মীর ভান্ডারেই সন্তুষ্ট। তাই নাকি ঢেলে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন, মানুষ কি কেবল ভাতা পাচ্ছে বলেই তৃণমূলকে ভোট দিলো আর কোনো কারণ নেই? লক্ষ্মীর ভান্ডার একাই দুর্নীতি অভিযোগ অভিযুক্ত তৃণমূলকে ভোট দিয়ে সবুজ ঝড় তুলে দিল? কিন্তু রাজ্যে তৃণমূলের এতো দুর্নীতির মধ্যেও কেন তৃণমূলের বদলে মানুষ বিজেপিকে ভোট দিল না।

হ্যাঁ লক্ষ্মীর ভান্ডার একটা কারণ বটেই। কারণ গণতন্ত্রে মানুষ সরকারের কাছে কিছু আশা করেই ভোট দেয়। কিন্তু এতো বছর ধরে মানুষকে ভোটের আগে যে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই পূরণ হয়নি। সেখানে মানুষের কাছে এই লক্ষ্মীর ভান্ডার কিছুটা খড়কুটোর মতো অর্থাৎ নাই মামার চেয়ে কানামামাকে মানুষ গ্রহণ করেছে।

আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতি তত্ত্ব নিয়ে বিজেপি দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। সেটা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি বেশ কয়েকটি কারণে। তার মধ্যে অন্যতম বামেদের দাবি করা সেটিং তত্ত্ব। সত্যিই তো তৃণমূলের নেতারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে বার বার কেন্দ্রীয় এজেন্সির জিজ্ঞাসাবাদের দোড়গোড়ায় গিয়েছে কিন্তু হেমন্ত সোরেন বা কেজরিওয়ালের মতো কোনো জোড়াল পদক্ষেপ বাঙলায় হয়নি। ফলে মানুষ কিন্তু সেটিং তত্ত্বকে বিশ্বাস করেছে। আর বিজেপিকে দুর্নীতিবাজদের ওয়াশিং মেশিন বলেই মেনেছে। কারণ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত যারাই বিজেপিতে গেছে তারাই এখন দলের সামনের সারিতে বসে আছে। অতএব তৃণমূলের এই দাবিও, এক্ষেত্রে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। আর বিজেপির সমস্ত দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন মেকি হয়েছে মানুষের কাছে।

অন্যদিকে বিজেপির এই ৪০০ পার স্লোগান বিজেপির কাছে বুমেরাং হয়েছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। অন্যান্য জায়গার মতো বাঙালিও ভয় পেয়েছে। কারণ গণতন্ত্রের আঁতুরঘরে বাঙালি একাধিপত্য কখনো মেনে নিতে পারেনি। তার বড় উদাহরণ ৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। আর সেখানে বিজেপি ৪০০ পার করার স্লোগান দিয়েছে। মোদী সরকারের একাধিপত্য হবে। ফলে সংবিধানের পরিবর্তন হবে, আগামীতে দেশে আর ভোট হবে না- বিরোধীদের এই দাবিগুলো মানুষের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাস যোগ্য হয়ে উঠেছে। অন্তত শিক্ষিত বাঙালি কখনোই চায়নি, সংবিধান পরিবর্তন বা ভোটাধিকার চলে যাওয়াকে। এক্ষেত্রে বিরোধীরা সফল। কারণ ৪০০ পার করলে বিজেপি কি করতে চায় দেশে তার স্পষ্ট রূপরেখা দেয়নি মোদী শাহরা। এই ধোঁয়াশার জন্যই বিরোধীদের দাবি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

বিজেপি বার বার দাবি করেছে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বের দরবারে ভারতের মান ফিরিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু বিশ্ব দরবারে ভারতের সমাদৃত হওয়ার থেকেও বড় বিষয় ছিল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করা। সেখানে করোনা পরবর্তী সময়ে কেবল ফ্রি-তে রেশন যথেষ্ট হয়নি।ব্যাপক হারে দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি, ট্যাক্স বৃদ্ধি, রান্না গ্যাস, পেট্রোল, ওষুধের দাম বাড়া, চিকিৎসা খরচ বাড়ার মতো বহু বিষয় যা আম আদমির নাভিশ্বাস তুলেছে। রাম মন্দির গড়া, ৩৭০ ধারা বিলোপ করতে করতে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার দিকে মোদী সরকার ফিরেও তাকায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *