আমাদের ভারত, ১৩ ডিসেম্বর: অযোধ্যায় রামমন্দির স্থাপিত হলেও বাবরি মসজিদ বিতর্ক এখনও পিছু ছাড়েনি। সম্প্রতি ভারতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেছেন মুর্শিদাবাদে সত্তর শতাংশ মুসলমান, তাই সেখানেই হোক বাবরি মসজিদ। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে হুমায়ুনকে পিতৃপরিচয় বদল করার পরামর্শ দিলেন অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী। ওনার বক্তব্য, এই মুহূর্তে যখন ভারতে বাংলাদেশের বিষয়ে পরিবেশ যথেষ্ট উত্তপ্ত রয়েছে ঠিক তখনই মূলত প্রচারের আলোয় আসার জন্য পাগলের প্রলাপ বকছেন হুমায়ুন। অর্বাচীনের মত কথা বলার জন্য তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মাঝে মধ্যেই বকাঝকা খান হুমায়ুন। তারপরেও স্বভাবের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা রামমন্দির মামলার অন্যতম প্রধান পিটিশনার এবং মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মূল স্থপতি। রাম মন্দিরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল যে বাবর সেই জাহিরউদ্দিন মহম্মদ বাবরের নামে মসজিদ বাংলায় যে করতে চাইবে তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে হিন্দু মহাসভা। চন্দ্রচূড় বাবুর বক্তব্য, মানুষের মধ্যে ভালো খারাপ সব ধরনের মানুষ থাকে, কিন্তু ভারতবর্ষের দুর্ভাগ্য এদেশের বামপন্থী ইতিহাসবিদরা যারা প্রকৃত জাতীয়তাবাদী মুসলমান শাসক বা ব্যক্তিত্ব ছিলেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই তাদের ইতিহাসকে গোপন করেছে। কিন্তু যারা জিহাদী সন্ত্রাসী ছিল একাধিক কু-কর্ম থাকা সত্ত্বেও তাদেরকেই হিরো হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। সেই জন্যই রামমন্দিরকে ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে যে নরাধম বাবর, ধর্মান্ধ মৌলবাদী ঔরঙ্গজেব, রাজপুত রমণীদের জোহরব্রততে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা নরপিশাচ আলাউদ্দিন খিলজি, বহিরাগত আক্রমণকারী আহম্মদ শাহ্ আবদালিদের মত ঘাতকদের নায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের আসল রোলমডেল যেমন ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দেওয়া আসফাকুল্লা খান, অত্যন্ত পন্ডিত ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি ঔরঙ্গজেবের দাদা দারাশিকো, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিদ আবদুর রহিম খান খানা বা তৃতীয় পনিপথের যুদ্ধে মারাঠাদের কামান বিভাগের প্রধান সেনাপতি ইব্রাহীম খান গার্দিদের মত মহান ব্যক্তিত্বদের বীরত্বকে আড়াল করা হয়েছে মুসলমানদের ধর্মান্ধ করে রেখে ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে। ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর বক্তব্য, যে বাবর রামমন্দিরকে ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে তার নামে মসজিদ করে কী বার্তা দিতে চান হুমায়ুন? অতই যদি বাবর প্রিয় হয় তাহলে পারলে এফিডেভিট করে বাবার নাম পরিবর্তন করে জাহিরউদ্দিন মহম্মদ বাবর করে নিয়ে কিছু দিনের জন্য বাবরের জন্মভূমির দেশ থেকে ঘুরে আসুক হুমায়ুন। কত ধানে কত চাল উনি টের পাবেন। উনি যদি প্রকৃত জাতীয়তাবাদী মুসলমান হন তাহলে বাবর প্রীতি এবং ঘৃণার রাজনীতি ছেড়ে ইব্রাহীম খান গার্দির নামে মসজিদ করুন।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মুহূর্তের ভুলে জিতে যাওয়া যুদ্ধ হেরে গিয়েছিলেন মারাঠারা। কিন্তু সেই যুদ্ধে মারাঠাদের পক্ষে প্রধান কামানদার ইব্রাহীম খান গার্দি এবং তাঁর আট হাজার মুসলমান সেনা সবচেয়ে ক্ষতি করেছিলেন বহিরাগত আক্রমণকারী আফগানদের। পরে উনি ধরা পড়লে আহম্মদ শাহ্ আবদালি যখন তাঁকে মুসলমান ভাতৃত্বের দোহাই দিয়ে কাবুল যেতে বলে তখন তিনি ঘৃণাভরে তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেন। এর ফলে ওনাকে নৃশংস ভাবে খুন করে আবদালি। ইব্রাহীম খানের মত মুসলমান প্রাণ বলিদান দিলেও নিজের ইমান বলিদান করেননি। তিনি ধর্মের আগে নিজের দেশমাতৃকাকে স্থান দিয়েছেন। এই ইতিহাস সবার জানা প্রয়োজন বলেই ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী চান। যদি মসজিদ করতে হয় তাহলে নরপিশাচ বাবরের বদলে দেবতুল্য মহাবীর ইব্রাহীম খান গার্দির নামে মসজিদ হোক। সেক্ষেত্রে ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করে গার্দি মসজিদ স্থাপনের জন্য টাকা তুলে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।