আমাদের ভারত, কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর: আজ আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। আর কান্নাকাটি নয়, এবার হিন্দুদের পরাক্রম দেখানোর সময় এসেছে। ‘৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে সোমবার ধর্মতলায় রানি রাসমণিতে জড়ো হওয়া হিন্দুদের এভাবেই উজ্জীবিত করলেন আরএসএস–এর বিশিষ্ট নেতা যিষ্ণু বসু। বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘর লুটপাট, হিন্দু মা–বোনেদের সম্ভ্রম লুটের প্রতিবাদ এবং চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর মুক্তির দাবিতে আজ রানি রাসমণিতে জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। বাঙালি হিন্দু সুরক্ষা সমিতির নামে ডাকা এই সভায় স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ সহ অনেক সাধুমহাত্মা যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা হিন্দুদের জেগে ওঠার আহ্বান জানান।
এদিনের সভায় সংঘ নেতা যিষ্ণু বসু বামপন্থীদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর চরম নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যারা প্যালেস্টাইনে কিছু হলে চোখের জলে কলকাতার রাজপথ ভিজিয়ে দেয়, তারা আজ কোথায়?কোন গর্তে লুকিয়ে আছে তারা?
যিষ্ণু বসু ‘৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার বীরত্ব এবং বলিদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সেই সময় পাকিস্তানি খান সেনারা ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে ছিল, তার মধ্যে ২৫ লক্ষই ছিল হিন্দু। তারা বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করত। হিন্দু মা-বোনেদের খুন এবং ধর্ষণ করেছে। অনেককে ধর্মান্তরিত করেছে। কারণ তারা মনে করত হিন্দু নারী হচ্ছে গনিমতের মাল। খান সেনাদের নৃশংসতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে জিষ্ণু বসু বলেন, চুকনগরে একদিনে ৩০ হাজার হিন্দুর প্রাণ নিয়েছিল তারা।
বর্তমানে বাংলাদেশে লাগাতার হিন্দুদের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্যালেস্টাইনের জন্য যারা আন্দোলন করেন, কান্নাকাটি করেন, কলকাতার রাজপথ চোখের জলে ভিজিয়ে দেন, আজ যখন হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে, তখন তারা কোথায়? কোন গর্তে লুকিয়ে আছে?
এরপরেই তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ কান্নাকাটি করার জন্য এখানে আমরা জড়ো হইনি। এবার আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এসেছি। তিনি বলেন, আজ যদি আমরা আন্দোলনে না নামি তাহলে আর মাত্র ২০ বছর পর আপনাকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে আপনার সামনেই আপনার মা–বোনকে ধর্ষণ করবে।
ভারত সেবাশ্রম সংঘের স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, একজন বলেছেন, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে মুসলিম শাসন কায়েম করবে। তিনি আসলে ঠিকই বলেছেন, কারণ তিনি তাঁর নিজের ধর্মে বিশ্বাসী। তিনি তাদের ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন, তাই তিনি একথা বলছেন। কিন্তু আমরা মুর্খ হিন্দুজাতি। উপস্থিত হিন্দুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা কি আমাদের ধর্মগ্রন্থ পড়েছি? আমরা কি দেখেছি, ধর্মগ্রন্থে কি লেখা আছে? এই প্রসঙ্গে তিনি চৈতন্য মহাপ্রভুর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চৈতন্য মহাপ্রভু নবদ্বীপের ন’টি দ্বীপ থেকে হাজার হাজার মানুষ জড়ো করে অত্যাচারী কাজীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তিনি নজরুল ইসলামের কবিতার লাইন তুলে বলেন, তিনি বুঝেছিলেন হিন্দুরাই হচ্ছে ভারতের প্রাণ। তাই হিন্দু নাম জপ করলে আপনার মধ্যে শক্তির জাগরণ ঘটবে, বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। তখনই অত্যাচারিত হিন্দুর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন।