*মহাকুম্ভ ২৫*
অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২৯ জানুয়ারি: মহাকুম্ভয় পদপিষ্ট হয়ে হতাহতের খবর তো সবাই শুনছেন, ছোট পর্দায় দেখছেন। এ নিয়ে আমিও একাধিক খবর লিখেছি আজ, আমার নিউজ এজেন্সিতে। তবে, সিরিজের পাতায় আসুন কিছু বাবা-চর্চা করা যাক! হাজারো ‘বাবা’-র ভিড়ে ম’ ম’ করতে শুরু করেছে কুম্ভ। এর মধ্যে অনেক বাবাই কিন্তু অনন্য। এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে হারিয়ে যাচ্ছে তাঁদের সেই অনন্যতা। এঁদের মধ্যেও যেন স্বতন্ত্র সত্ত্বা নিয়ে কাটান বাবা মোক্ষপুরী।
এই বাবা আদতে আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর বাসিন্দা মাইকেল। একসময় মার্কিন সেনাবাহিনীতে সৈনিক ছিলেন। ছেলের মৃত্যুতে তিনি এতটাই বিধ্বস্ত হন যে সব কিছু ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি ভারতে আসেন। তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রা। সনাতন ধর্মে যোগদানের পর তিনি মাইকেল থেকে হন বাবা মোক্ষপুরী।
মহাকুম্ভে এসে তিনি বলেন, “একটা সময় এসেছিল যখন আমি বুঝতে পারি জীবনে কিছুই স্থায়ী নয়। তখনই আমি পরিত্রাণের সন্ধানে এই অবিরাম যাত্রা শুরু করি। জুনা আখড়ার সঙ্গে যুক্ত হই। সনাতন ধর্ম প্রচারেই সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছি।”
বাবা মোক্ষপুরী ২০০০ সালে তাঁর পরিবার (স্ত্রী এবং পুত্র) নিয়ে প্রথমবার ভারতে আসেন। তিনি জানান যে, এই যাত্রা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। এই সময় তিনি ধ্যান এবং যোগব্যায়াম শেখেন। শুরু হয় তাঁর আধ্যাত্মিক জাগরণ, যা ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি আহ্বান বলে তিনি মনে করেন।
বাবা মোক্ষপুরী এখন ভারতীয় সংস্কৃতি ও সনাতন ধর্মের শিক্ষা প্রচারের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেন। ২০১৬ সালে উজ্জয়িন কুম্ভের পর, তিনি প্রতি মাসে কুম্ভে অংশগ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি নেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের মহান ঐতিহ্য শুধুমাত্র ভারতে সম্ভব। বাবা মোক্ষপুরী তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রায় নিব করোলি বাবার প্রভাবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান যে, নিব করোলি বাবার আশ্রমে ধ্যান ও ভক্তির শক্তি তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। সেখানে যাওয়ার পর তাঁর মনে হল বাবাই যেন হনুমানের রূপ। এই অভিজ্ঞতা তার জীবনে ভক্তি, ধ্যান এবং যোগের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করে।
গত ১৩ জানুয়ারি মহাকুম্ভে অংশ নিতে প্রয়াগরাজে আসেন আমেরিকার ব্যবসায়ী এবং অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জোবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জোবস৷ স্বামীর মতো হিন্দুধর্মের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। স্টিভ জোবস বাবা নিব করোরিকে নিজের গুরু বলে মনে করতেন। তিনি নিব করোরি বাবার কাঞ্চি ধামও বহুবার পরিদর্শন করেছিলেন।
কথিত আছে, সেখানেই করোরি বাবা স্টিভকে আশীর্বাদ হিসেবে একটি কাটা আপেল দিয়েছিলেন৷ এই কারণে স্টিভ তাঁর কোম্পানির লোগো হিসেবে একটি কাটা আপেল রাখেন৷ স্বামীর মতো লরেন পাওয়েলও হিন্দুধর্মে গভীর বিশ্বাস রাখেন। আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী কৈলাশানন্দ গিরির কাছে দীক্ষাও নিয়েছেন তিনি। প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে তিনি নিরঞ্জনী আখড়ায় ১০ দিন কাটান। ক্যাম্পে লরেন পাওয়েলের থাকা ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।