আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২৫ মার্চ: একদিকে চলছে স্কুল। সেই স্কুল চত্বরেই চলছে তৃণমূলের ‘ইফতার মাহফিল’এর রান্না। স্কুল চত্বরে ম্যারাপ বেঁধে চলছে ইফতারের আয়োজন। দুপুর থেকেই একে একে আসতে শুরু করেছেন আমন্ত্রিত সদস্য থেকে ধর্মগুরুরা। বিরিয়ানির গন্ধে ছাত্রীদের পঠন পাঠন শিকেয়। এমনই ছবি ধরা পরেছে খোদ রামপুরহাটের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্কুলে। ঘটনাটি ঘটেছে রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে।
ওই স্কুলের বর্তমান সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। সেই স্কুলেই স্কুল চলাকালীন চলছে ইফতারের রান্না। ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে রামপুরহাট শহর তৃণমূল সংখ্যালঘু সেল। স্কুল চলাকালীন রান্না করার ফলে পঠন পাঠনের সমস্যা হয়েছে ছাত্রীদের। বিরিয়ানির গন্ধের স্বাদ পেয়ে পড়াশোনায় মন বসেনি ছাত্রীদের। এছাড়া মহিলাদের স্কুলে বহিরাগতদের আনাগোনা চলছে অবাধে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ। তাদের দাবি, স্কুল চলাকালীন রাজনৈতিক দলকে কিভাবে স্কুলে ইফতারের অনুমতি দেওয়া হল? স্কুল চলাকালীন বড় বড় হাঁড়ি হুন্ডি, গ্যাস নিয়ে কিভাবে রান্নার কাজ হল? ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না স্কুলের সহকারি শিক্ষকা কবিতা সাহানা বলেন, “আজকে আমি দায়িত্বে রয়েছি। আমি কোনো অনুমতি দিইনি। রান্না হচ্ছে দেখছি। শুনেছি ইফতার হবে সন্ধ্যায়। খেলাধুলোয় ছাত্রীদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।”
স্কুল পরিদর্শক দেবব্রত ঘোষ বলেন, “সোমবার আমি ওই স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এনিয়ে স্কুলের কেউ কিছু আমাকে বলেননি। এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
রামপুরহাটের মহকুমা শাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, “স্কুলের বিষয়টা পরিচালন সমিতি দেখেন। এনিয়ে কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
স্কুলের সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু রান্নার তো কোনো কথা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
রামপুরহাট পুরসভার কাউন্সিলর সিপিএমের সঞ্জীব মল্লিক বলেন, “স্কুল চলাকালীন এরকম অনুষ্ঠান মারাত্মক অপরাধ। ছাত্রীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দেবে না রান্নার ঘ্রাণ নেবে সেটাই বুঝতে পারছি না। তারপরও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা কিভাবে বলেন পঠনপাঠনে কোনো সমস্যা হয়নি? আসলে শাসক দলের ভয়ে সবাই জড়সড়। এই সরকারের আমলে শিক্ষার দশা বেহাল হয়ে পড়েছে। পড়াশোনার মান তলানিতে ঠেকেছে।”
বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “এখন রাজ্যে সার্কাস পার্টি চলছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। থাকলে স্কুল চলাকালীন একটি রাজনৈতিক দলকে এভাবে ইফতার করার জন্য জায়গা ছেড়ে দিত না। শুধুমাত্র সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে স্কুলের পঠনপাঠন শিকেয় তুলে ইফতার চলছে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা করছি। সেই সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”