আমাদের ভারত, ২৯ জুন: কসবা ল’ কলেজের ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। দফায় দফায় রাজ্যের বিরোধী দলগুলো আন্দোলনে সামিল। শনিবার বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গ্রেফতার হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সহ ৩২ জন নেতা কর্মী। ব্যক্তিগত বন্ডে সই করতে অস্বীকার করায় সারারাত লালবাজার বসিয়ে রেখে সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়। বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস, রাজ্য সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন সুকান্ত মজুমদার। এরপর কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘটনায় এক বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলে দেন তিনি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, একটি কলেজ ইউনিয়নের পদ পাওয়ার জন্য যদি এক ছাত্রীকে ধর্ষিত হতে হয় তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস দলের ভেতর পদের জন্য মহিলাদের কী অবস্থা হয়? তার এই বিস্ফোরক প্রশ্ন ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ঝড় উঠেছে। কসবার ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের যোগাযোগ থাকার একাধিক প্রমাণ মিললেও তৃণমূল কংগ্রেসের বেশির ভাগ নেতৃত্ব দাবি করেছেন, ধর্ষকের সঙ্গে তাদের দলের যোগাযোগ নেই।
এদিকে শনিবার গ্রেফতার হয়ে রবিবার সকালে লালবাজার থেকে বেরিয়ে আসেন সুকান্ত মজুমদাররা। এরপর সুকান্তবাবু সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “গতকাল দুপুর থেকে সারারাত লালবাজার সেন্ট্রাল লকআপে থাকার পর কিছুক্ষণ আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত ভৃত্যে পরিণত হওয়া নির্লজ্জ, কাপুরুষ কলকাতা পুলিশের আওতা থেকে বেরিয়ে এলাম। স্বৈরাচারী মুখ্যমন্ত্রী তার দলদাস পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে আমাদের সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিকভাবে গ্রেফতার করানোর পর গতকাল রাতে আমাদের বিভিন্ন সময় বহুবার চাপ দিয়েছে, যাতে আমরা বেইল বন্ডে স্বাক্ষর করি। কিন্তু আমরা পুলিশের এই ফর্মান মানতে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আমরা কোথাও কোনও স্বাক্ষর করব না বরং পুলিশ আমাদের আদালতে পেশ করুক। কিন্তু অদ্ভূতভাবে গতকাল আমাদের পুলিশ চাপ দিয়েছে, যাতে আমরা দ্রুত সেন্টার লকআপ থেকে বেরিয়ে যাই এবং কোথাও কোনো স্বাক্ষর করার প্রয়োজন নেই।” বিজেপি নেতা আরো লিখেছেন, “আমি সরাসরি কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের ডিজিপি’কে প্রশ্ন করতে চাই, তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমাদের বলপূর্বক গ্রেপ্তার করে লালবাজারে নিয়ে আসা হলো? গতকাল দুপুরে পুলিশের আক্রমণে আমাদের বহু কার্যকর্তা আহত হয়েছেন। রাতে তাদের জন্য প্রাথমিক ওষুধেরও বন্দোবস্ত করা হয়নি, পর্যাপ্ত পানীয় জলের বন্দোবস্ত পর্যন্ত করা হয়নি। সেটুকুর জন্যও তাদের লড়াই করেতে হয়েছে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দাবি করেছেন, “গতকাল আবার স্পষ্ট হয়ে গেল, কিভাবে কাপুরুষ কলকাতা পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে রাজ্যে আইনের শাসনকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন স্বৈরাচারী মুখ্যমন্ত্রী। তাদের এতটুকুও সাহস নেই, তারা আমাদের আদালতে পেশ করতে পারে। রাজ্যে অরাজকতা এবং অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরীর লক্ষ্যেই যে এই ধরনের দুষ্কর্ম পুলিশকে ব্যবহার করে করা হচ্ছে তার নিদর্শন এই ঘটনা।
আর তার জন্যই কলকাতা পুলিশের এই ভয়, যে তারা আমাদের আদালতে পর্যন্ত পেশ করতে অসমর্থ্য হয়েছে। আমরা যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্বৃত্ত পিশাচ বাহিনীর হাত থেকে বাংলার মা-বোনদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য লড়াই লড়ছি, তা যেমন আমরা অব্যাহত রাখবো ঠিক তেমনি পুলিশকে ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের শাসনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই অব্যাহত থাকবে।”