আমাদের ভারত, ১৫ নভেম্বর: বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে, না হলে ধরে ধরে হত্যা করা হবে ইসকনের ভক্তদের। এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে সে দেশের মুসলিমরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকির কথা জানিয়ে ভারত ও আমেরিকার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইসকনের এক সদস্য। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ নেমে এসেছে। ভারত, আমেরিকা সহ বহু দেশে এই নিয়ে কড়া বার্তাও দিয়েছে ইউনুস সরকারকে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশে নানা ভাবে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে হিন্দু সহ অন্য সংখ্যালঘুদের।
বাংলাদেশে ইসকনের পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র রাম রতন দাস বাংলাদেশের এক কট্টরপান্থী নেতার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। সেই ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে যাচ্ছে শোনা যাচ্ছে, হিন্দুদের হত্যা করা হবে। এক বাংলাদেশি মৌলবাদী নেতা ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন মহম্মদ ইউনুস সরকারের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে রাধারমন দাস লেখেন, মহম্মদ ইউনুস সরকারকে বাংলাদেশি মুসলিমরা আল্টিমেটাম দিয়েছে যে ইসকনকে নিষিদ্ধ না করা হলে ভক্তদের ধরে ধরে খুন করতে শুরু করবেন তারা (এই ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি আমাদের ভারত)। এই ভিডিওটি প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতিবিদ তুলসী গবার্ডকেও ট্যাগ করেছেন রাধারমন দাস।
জানাগেছে, সম্প্রতি ঢাকায় উলেমা ঐক্য পরিষদ ইসকনের বিরুদ্ধে মানব বন্ধনের ডাক দিয়েছিল। সেখানেই বক্তব্য রাখার সময় বাংলাদেশি মৌলবাদী নেতা বলেন, ইসকনকে যদি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ না করা হয় তাহলে দেশের রাস্তাঘাটে ইসকন ভক্তদের হত্যা করা হবে।
এই নিয়ে রাধারমন দাস দাবি করেন, মৌলবাদী নেতা বলেছেন, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। নিষিদ্ধ না হলে ইসকন ভক্তদের উপর অত্যাচার ও গণহত্যা শুরু করব। হিন্দুদের হাত থেকে বাংলাদেশের পবিত্র ভূমি রক্ষা করতে হবে। এর জন্য আমরা ইসকন সদস্যদের বন্দি করে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা শুরু করব।
এর আগে চট্টগ্রামের মৌলবাদী সংগঠন হেফাজত ই ইসলাম, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার ডাক দেয়। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে। বাংলাদেশি মৌলবাদী নেতার ভিডিও পোস্ট করে তিনি লিখেছিলেন, ওরা যদি এভাবেই চলতে থাকে এবং ইসকনকে আক্রমণ করার প্ল্যান করে, তবে ওরা যেন তার পাল্টা পরিণামের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকে। এদের উদ্দেশ্যই ছিল সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো। ওরা কী স্লোগান তুলেছেন শুনুন মন দিয়ে। ইসকনকে ভাঙ্গার কথা, গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা, আগুন ধরানোর কথা বলছে।
৫ নভেম্বর বাংলাদেশের এক স্থানীয় ব্যবসায়ী ওসমান আলি ফেসবুকে ইসকনকে নিয়ে একটি পোস্ট করেন। সেখানে ইসকনকে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দেয় সে। সেই পোস্ট দেখে বিক্ষোভ দেখায় চট্টগ্রামের হিন্দুরা। অভিযোগ, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন তারা। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ঘটনাটি ঘিরে। পুলিশ সেনা পৌঁছায় চট্টগ্রামের হাজারি গলি এলাকায়। শতাধিক হিন্দুকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে সেনার বিরুদ্ধে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ ওঠে। একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে, যেখানে দেখা যায় বাংলাদেশের সেনা জওয়ানরা খালি রাস্তায় তান্ডব চালাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারেই বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটির প্রয়োজন নেই বলেই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান। সংবিধান সংক্রান্ত মামলায় বাংলাদেশ হাইকোর্টে তিনি বলেছেন, দেশের ৯০% নাগরিক মুসলিম। ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটির দরকার নেই। তারপরেই প্রশ্ন ওঠে তাহলে কী ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যাবে বাংলাদেশ? আর সেটা যদি বাস্তবে হয় তাহলে হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অবস্থা যে আরো করুন হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।