BJP, PC, কলেজগুলিতে প্রাক্তনীদের অবাধ গতিবিধি, অপরাধের একাধিক রেকর্ড সত্ত্বেও কিভাবে কলেজে চাকরি? কসবা কান্ডে কমিশনারকে প্রশ্ন বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির

আমাদের ভারত, ৩০ জুন:‌ কসবা ল’ কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় তথ্য অনুসন্ধান করতে এসে কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে একগুচ্ছ প্রশ্ন বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের। রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার নিজে এই দলটিকে নিয়ে সোমবার দেখা করেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গে। লালবাজারে প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক করেন তারা। তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল কলেজগুলিতে প্রাক্তনীদের অবাধ গতিবিধি কেন? পুলিশ কমিশনারকে এই প্রশ্ন করেন দেশের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিজে।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার পাঠানো এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিতে আছেন মুম্বাইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্তপাল সিং, আরেক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখী, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব এবং মননকুমার মিশ্র। এই চার সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম সোমবার সকালে কলকাতা পৌঁছায়। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সে দলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে যান কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারে। বেলা তিনটের পরে কমিশনার বর্মার সঙ্গে সুকান্ত এবং নাড্ডার পাঠানো প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। কসবা আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় আটকদের মধ্যে একজন প্রাক্তন ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত এই কলেজে যাতায়াত করতো কিভাবে? শুধু কসবার ওই কলেজ নয়, কলকাতার অন্য কলেজেও প্রাক্তনীদের দাদাগিরি চলে কিভাবে? কমিশনারকে সেই প্রশ্ন করেন সুকান্ত মজুমদার।

কেন্দ্রীয় শিক্ষা‌ প্রতিমন্ত্রীর কথায়, “আমি পুলিশ কমিশনারকে বলেছি কলকাতার কলেজগুলো আপনার তত্ত্বাবধানে থাকা এলাকার মধ্যে পড়ে। এই কলেজগুলোয় বহিরাগতদের গতিবিধির রক্ষা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দলের তরফে বর্মাকে প্রশ্ন করা হয়, যে গণধর্ষণে ধৃতদের মধ্যে একজন এর আগেও একাধিকবার নানান অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে, তার পরেও অবাধে অপরাধ মূলক কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছিল কিভাবে? এই ধরনের চিহ্নিত দুষ্কৃতিদের গতিবিধির উপর পুলিশের যথেষ্ট নজরদারি কেন থাকে না? নির্যাতিতার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে দলটির সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

এরপর ৩টে ৫০ নাগাদ লালবাজার থেকে বেরিয়ে কসবার আইন কলেজের দিকে রওনা দেয় বিজেপির প্রতিনিধি দল। সংবাদ মাধ্যমকে সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, পুলিশ কমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত ধৃতদের সাজা হবেই। ঘটনাস্থল থেকে যেসব তথ্য প্রমাণ পুলিশ সংগ্রহ করেছে এবং ইতিমধ্যে যে মেডিকেল অনুসন্ধান হয়েছে তা গণধর্ষণে অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ করার পক্ষে যথেষ্ট বলে জানান তিনি।

কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর বিজেপি নেতারা কসবার আইন কলেজে যান, তারা কিন্তু প্রবেশের আগে বাধা পান পুলিশের। কলেজের সামনে বিজেপি যুব সংগঠনের কর্মীদের জমায়েত ছিল। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বামপন্থী সংগঠনের কর্মীরাও ছিলেন সেখানে। কলেজের প্রবেশ পথে পুলিশের বড়সড় বাহিনী মোতায়েন রাখা ছিল। গার্ডরেল দিয়ে প্রবেশপথ ঘিরে রাখা হয়েছিল। এসবের মধ্যে সুকান্ত মজুমদার এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের সস্যরা পৌঁছায়। ১৫ মিনিট তাদের সঙ্গে বচসা চলে পুলিশ আধিকারিকদের। তারপর বিজেপি নেতৃত্ব সহ নাড্ডার পাঠানো দলের সদস্যদের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হয়। আর তখনই বাইরে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বামপন্থী সংগঠনগুলির তরফে বিজেপি নেতৃত্বকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়। বিজেপি কর্মী সমর্থকরাও পাল্টা বিরোধিতা শুরু করেন। দু’পক্ষের এক প্রস্থ হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তিও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

আইন কলেজে পরিদর্শন সেরে কসবা কলেজ এলাকাতে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল। সেখানে দলের সদস্য সত্যপাল‌ সিং জানান, কলকাতার পুলিশ কমিশনার ধৃতদের কঠোরতম শাস্তি হবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শাসক দল তৃণমূলকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, যার নামে এর আগে চারবার অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যে এর আগে চারবার গ্রেফতার হয়েছে, সে কিভাবে ওই কলেজে চাকরি পেল? স্থানীয় বিধায়ক কলেজ পরিচালন সমিতির প্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *