VC ৯ বছর উপাচার্য ছিলেন, বেতন পাচ্ছেন না ১১ মাস ধরে

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, কলকাতা, ২২ এপ্রিল: উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে রাজ্য-রাজ্যপাল মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রায় ৯ বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা এক প্রবীন অধ্যাপক ১১ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। প্রাপ্য আদায়ের জন্য তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইতিমধ্যে আইনি লড়াইয়ে তাঁর পকেট থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা।

উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডঃ সাধন চক্রবর্তীকে ২০১৫ থেকে আচার্য-রাজ্যপাল প্রথমে ছ’মাস করে দুই প্রস্থে, তার পর ৪ বছরের জন্য কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দেন। এই মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে আরও ৪ বছরের জন্য (২০২৪-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ইতিমধ্যে বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে ’২৩-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-র সঙ্গে সাধনবাবুকেও পদত্যাগ করতে হয়। সেদিনই আচার্য-রাজ্যপাল তাঁকে তিন মাসের জন্য ফের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দেন।

অধ্যাপকরা তাঁদের মূল কর্মস্থল থেকে ‘লিয়েন’ নিয়ে আচার্য-রাজ্যপাল এবং শিক্ষাদফতরের নির্দেশে উপাচার্যের দায়িত্ব নেন। সাধনবাবুও সেভাবে যাদবপুর থেকে আসানসোলে গিয়েছিলেন। গত ২৭ মে তাঁর উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে বিধি মেনে তাঁর মূল বিভাগে অধ্যাপনায় ফিরে আসার জন্য সাধনবাবু যাদবপুরের তৎকালীন উপাচার্য ডঃ সুরঞ্জন দাসের কাছে আবেদনপত্র দেন।

এর ক’দিন বাদে অবসর নেন সুরঞ্জনবাবু। কিন্তু যাদবপুরের রেজিস্ট্রার সাধনবাবুকে লিখিতভাবে জানান, আগের মত অধ্যাপনার দায়িত্বে যোগ দিতে গেলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিপত্র লাগবে। এই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান সাধনবাবু। তাঁর আইনজীবী বলেন, এই নির্দেশ অভূতপূর্ব এবং বেআইনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আইন অথবা সনদে এরকম কোনও বিধান নেই। হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, এই মামলায় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কেও ‘পক্ষ’ করতে হবে। সাধনবাবু সেই নির্দেশের বিরোধিতা করেও ডিভিশন বেঞ্চে যান।

ডিভিশন বেঞ্চ গত অক্টোবরে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ করে যাদবপুরে পুরনো বিভাগে সাধনবাবুর প্রত্যাবর্তনের বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে বলে। কিন্তু অভিযোগ, এজলাসে শুনানি না হওয়ায় মামলাটি ঝুলে থাকে। এই অবস্থায় ফের ডিভিশন বেঞ্চে যান সাধনবাবু। গত মার্চ মাসের শেষে ডিভিশন বেঞ্চ ‘যত সত্বর সম্ভব’ মামলার নিষ্পত্তি করানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশও সার।

অধ্যাপক ও উপাচার্যরা সরকারিভাবে যথাক্রমে ৬৫ এবং ৭০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। এই অবস্থায় আর কয়েক মাস বাদেই প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ সাধন ভট্টাচার্যর বয়স হবে ৬৫। যাদবপুরে যোগ দেওয়ার চিঠি না পাওয়ায় গত ১১ মাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ পাননি। বেতনও পাননি। আবার খাতায়-কলমে তিনি উপাচার্য বা অধ্যাপক কোনওটাই নন।

এ ব্যাপারে সাধনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে এই প্রতিবেদককে বলেন, “উপাচার্য পদের মেয়াদ শেষে অপরাধী না হয়েও নিজের বিভাগে যোগ দিতে পারছি না। বেতন পাচ্ছি না ১১ মাস ধরে। গোটা দেশে কোনও প্রবীন অধ্যাপককে কখনও এরকম অবস্থায় পড়তে হয়নি।”

ওপরমহলে জানাননি?
তাঁর উত্তর, “শিক্ষা দফতর সব জানেন।”
যাদবপুরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, হাইকোর্ট সাধনবাবুকে তাঁর পুরনো বিভাগে যোগ দেওয়ানোর নির্দেশ দিলে তা কার্যকর করা হবে।” কিন্তু আর কোনও উপাচার্যর পুরনো বিভাগে যোগ দিতে আগের বিশ্ববিদ্যালয় অথবা আদালতের নির্দেশ আনার নজির আছে কি? সেই আধিকারিক বলেন, “তা বলতে পারব না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *