আমাদের ভারত, ১৪ মার্চ: বাংলায় বিজেপি ঝড়ের পূর্বাভাস দিলেন ভোট কুশলি প্রশান্ত কিশোর। তাঁর বিশ্লেষণ ভালো রকম প্রভাব বিস্তার করতে পারে, কারণ মানুষ সেটা বিশ্বাস করে। শেষ কয়েক বছরে তাঁর বিশ্লেষণ মিলে গেছে। এক সময় তিনি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট কুশলি। একটি সাংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি তৃণমূলের থেকে অনেক বেশি আসন পেতে চলেছে বাংলায়। তাঁর কথায়, বিজেপি তৃণমূলের তুলনায় সার্বিক ভাবে ভালো ফল করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। লোকসভা ভোটে বিজেপির অবাক করা ফলাফল দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকুন। লোকসভা ভোটে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসবে বলে দাবি ভোট কুশলি প্রশান্ত কিশোরের।
তিনি বলেন, এর জন্য কেউ কেউ আমাকে বিজেপির এজেন্ট বলতে পারেন, কিন্তু এটা না বললে আমার পেশার প্রতি আমি সৎ থাকব না।
প্রশ্ন উঠছে কিসের ভিত্তিতে প্রশান্ত কিশোর এই কথা বলছেন? ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর বাংলায় বিজেপির পরিস্থিতি ভালো ছিল না। বিধানসভা নির্বাচন হোক বা স্থানীয় নির্বাচন, সব ক্ষেত্রেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমনকি বিজেপিকে উপ নির্বাচনে হারিয়েছে তৃণমূল। তাহলে কোথা থেকে এই আশার আলো দেখছেন প্রশান্ত কিশোর?
গত বিধানসভা নির্বাচনে মোদী তথা বিজেপির তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছিল। এতে অনেকেই মনে করেছিলেন বিজেপির এই আক্রমণ তাদেরকে পিছিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বিজেপির সেই কৌশল এবার বদলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে না এবার বিজেপি। সার্বিকভাবে সব ইস্যুতে তৃণমূলকে দায়ী করছে বিজেপি।
দ্বিতীয়ত, অনন্ত মহারাজকে সাংসদ করার ফলে রাজবংশী সম্প্রদায়কে নিজেদের দিকে টানতে পেরেছে বিজেপি। এই রাজবংশীরা পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম তপশিলি জাতি। অনন্ত মহারাজের হাত ধরে এদের সমর্থন পেয়ে বিজেপি ভালো ফল পেতে চলেছে। রাজবংশীদের সমর্থন পাওয়ার ফলে উত্তরবঙ্গের আটটার মধ্যে চারটি আসনে নিশ্চিত ভাবে বিজেপি ভালো ফল করবে। কারণ এগুলোতে রাজবংশীদের ভালো প্রভাব রয়েছে। যদিও বিজেপির আশা, উত্তরবঙ্গের আটটি আসনে জয়ী হবে তারা।
অন্যদিকে কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূলের পৃথক লড়াইয়ে সুবিধা পাবে বিজেপি। ইন্ডি জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৃণমূল আদপে বিজেপিকে আরও নিজের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হতে সাহায্য করেছে। এরফলে এককভাবে তৃণমূল বিরোধী ভোট বিজেপি পাবে। অন্যদিকে ভোট বন্টনের সুবিধাও পাবে বিজেপি।
সিএএ লাগু করাও বিজেপিকে শক্তিশালী করেছে। বিজেপি নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন জয় করেছে। মনে করা হয় মতুয়াদের সমর্থন যেদিকে যায়, তাদের জয় নিশ্চিত। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্তত চারটি লোকসভা আসনে এরাই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। মতুয়াদের মত
সিএএ’র সুবিধা পেতে চলেছে রাজবংশী হিন্দুরা। ৭১ সাল থেকে এরাও নাগরিকত্ব পায়নি। এইভাবে ১০ থেকে ১২টি আসনে বিজেপি এগিয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে সন্দেশখালির প্রভাব পড়বে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের মতো। সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে যেভাবে বিজেপি এগোচ্ছে তাতে বাংলায় বড় আকার ধারণ করেছে এই ইস্যু। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামকে যেভাবে বামেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পরিণত করেছিল তৃণমূল, একইভাবে সন্দেশখালিকেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পরিণত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।
আবার হিন্দু ভোট একত্রিত করার লাগাতার চেষ্টাতেও বেশ খানিকটা সফলতার দিকে এগিয়েছে বিজেপি। প্রথমত, বিজেপি হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করে তুষ্টিকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে এক নতুন রাজনীতির জন্ম দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, যা হিন্দু ভোটকে প্রভাবিত করেছে। আর হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ৭১ শতাংশ।
তপশিলি জাতি বিজেপির পক্ষে একত্রিত হয়েছে। রাজবংশী, মতুয়াদের মতো বড় অংশের মানুষ যেমন বিজেপির পক্ষে চলে এসেছে তেমনি চা বাগানের শ্রমিক ও জঙ্গল মহলের আদিবাসীরা ২০১৯ সালে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল, তাদের আস্থাও অটুট আছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এভাবেই বাংলায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে বিজেপি বলে ধারণা করা হচ্ছে।