আমাদের ভারত, কলকাতা, ২০ মে: স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ (কার্তিক মহারাজ) সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী সমাবেশে যে অভিযোগ করেছেন, তার জন্য ২ দিনের মধ্যে কার্তিক মহারাজের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানানো হল। সোমবার এ ব্যাপারে আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানায়।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মহারাজ দাবি করেছেন, সন্ন্যাস বা সন্ন্যাসীদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘ন্যূনতম জ্ঞান নেই’। আর সেই কারণেই তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা বলেও মহারাজের দাবি। আইনি চিঠিতে কার্তিক মহারাজ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তিনি ব্যথিত। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মহারাজের অনুগামীদের ভাবাবেগেও আঘাত করেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কার্তিক মহারাজের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যের তরফে আইনজীবী অনীশ কুমার মুখোপাধ্যায়ের সই করা আইনি চিঠিটি পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
৩০, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট ঠিকানায় লেখা ছ’পৃষ্ঠার এই চিঠিতে লেখা হয়েছে, “আমার মক্কেল সমাজের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের রীতি অনুযায়ী সন্ন্যাসী। এ ছাড়াও তিনি মুর্শিদাবাদের আওরাঙ্গাবাদের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সম্পাদক।”
আইনজীবীর চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা হয়েছে, “আমার মক্কেল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। আজীবন তিনি মানব সেবার জন্য নিজেকে নিবেদিত করেছেন। হিন্দু আধ্যাত্ম্যবাদের প্রাচীন ঘরানার পূর্ণ মর্যাদা রেখে বর্তমান হিন্দু সমাজকে নয়া উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। একদিকে রয়েছে তাঁর মাতৃভূমির প্রতি প্রবল আকর্ষণ ও ভালবাসা। অন্যদিকে তিনি মানবিকতার প্রতি সহানুভূতি ও সামাজিক সংস্কারে রত।”
সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই দুঃখপ্রকাশ করার কথা জানিয়ে আইনজীবী লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ওই বিবৃতির বয়ান আগাম আমার মক্কেলের তরফে আমাকে দিয়ে মঞ্জুর করিয়ে নিতে হবে। যে কোনও ওয়েবসাইট, দৈনিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেলে আমার মক্কেল সম্পর্কে এ ধরণের মন্তব্য করা থেকে যেন অভিযুক্ত সম্পূর্ণ বিরত থাকেন।”
শনিবার হুগলির গোঘাটে একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, “এই যে বহরমপুরের এক জন মহারাজ আছেন। আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকায় তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে আছে। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ডাইরেক্ট পলিটিক্স করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’
আইনজীবীর ইংরেজি চিঠিতে এই অংশটি বাংলায় উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা হয়েছে, “আমার মক্কেল এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ সম্পর্কে কোনওভাবে এ ধরণের বিবৃতি তিনি দেবেন না, এই মুচলেখা দিতে হবে। ৪ দিনের মধ্যে তিনি লিখিতভাবে এই বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন। যদি সেই জবাব না আসে, আপনার ইচ্ছানুসারেই আমার মক্কেল মিথ্যে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের নামে অপবাদ ছড়ানোর দায়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।
সেই সঙ্গে এই বিষয়ে মিথ্যে, ভিত্তিহীন, কুরুচিকর ও অপমানজনক মন্তব্য করার জন্য আপনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধি প্রয়োগের বিষয়টিও আমার মক্কেলের বিবেচনাধীন রয়েছে।
রবিবার রাজ্যে ভোটের প্রচারে এসে এই নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। পুরুলিয়া এবং বিষ্ণুপুরের জনসভা থেকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সাধুসন্তদের অপমান করার অভিযোগ তুলে সরব হন তিনি। বিষ্ণুপুরের সভা থেকে মোদী বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল সাধুসন্তদের গালিগালাজ করছে। ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ বিভিন্ন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাকে গৌরবান্বিত করেছে। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সাধুরা এবং এই সংগঠনগুলি দেশকে নষ্ট করছে। আমার অভিযোগ, এখানকার মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে আমাদের সাধুদের এবং মহান সংগঠনগুলিকে গালিগালাজ করছেন। বদনাম করছেন। হিন্দুদের ভাগীরথীতে ডুবিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অনেক ভেবেচিন্তে এই কথা বলানো হয়েছিল। ভোটব্যাঙ্কের জন্য সাধুদের অপমান করা হচ্ছে।’’