পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ মে: গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান” সংবাদ শিরোনামে এসেছিল। আরামবাগের এক প্রশাসনিক সভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘাটালের সাংসদকে সামনে রেখে মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ঘোষণার পর প্রায় ১৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও বাস্তবে মাস্টার প্ল্যানের কোনো কাজই শুরু হয়নি। শুধুমাত্র পাঁচটি স্লুইসগেট পুননির্মাণের কাজ ছাড়া। যা ঐ ঘোষণার আগে সেচ দপ্তর রুটিনমাফিক কাজের মধ্যেই টেন্ডার করেছিল। বর্তমানে সেই কাজ শুরু হয়েছে। তাও বর্ষা আসার আগে আদৌ ওই কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ।
অন্যদিকে চন্দ্রেশ্বর খালকে শিলাবতীর সঙ্গে যুক্ত করা, ঘাটাল শহরে পাম্প হাউস নির্মাণ ও শহরে রিটেনিং ওয়াল নির্মানে বর্তমানে নানা ধরনের বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এখনো শিলাবতীর নিম্নাংশের ২৩ কিলোমিটার অংশ খননের টেন্ডার হয়নি। সব মিলিয়ে আসন্ন বর্ষায় অত্যধিক বৃষ্টি হলে বা ব্যারেজ থেকে বেশি পরিমাণ জল ছাড়া হলে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা আজ ঘাটালের রাধারানী সরকার প্রাইমারি স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা শেষে কমিটির ডাকা এক সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী ১৭ জুন ঘাটালের মহকুমা শাসক ও সেচ দপ্তরে এক বিক্ষোভ-ডেপুটেশন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সভাপতি ডাঃ বিকাশ চন্দ্র হাজরা, কার্যকরী সভাপতি সত্য সাধন চক্রবর্তী, যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও দেবাশীষ মাইতি, অফিস সম্পাদক কানাই লাল পাখিরা প্রমুখ।
কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, বহু প্রতীক্ষিত এই মেগা প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো অর্থ বরাদ্দ না করায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। আমরা সেই সময় উনাকে চিঠি দিয়ে বলেছিলাম, এই প্রকল্প রূপায়ণে আমাদের কমিটি সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি ‘তদারকি কমিটি’ গঠন করে আলোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে প্রকল্পটি দ্রুত রূপায়িত করা হোক। কিন্তু রাজ্য সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে গঠিত তদারকি কমিটিতে আমাদের কমিটির কাউকে রাখা হলো না। শুধু তাই নয়, যখন প্রথমেই দরকার ছিল শীলাবতী নদীর নিম্নাংশ সংস্কার করার, সেই কাজে হাত না দিয়ে যে কাজগুলি ধরা হলো তা হলো যেগুলিতে স্থানীয়দের বাধা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ফলস্বরূপ প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও কার্যত মাস্টার প্ল্যানের কোনো কাজই এখনো শুরু করা গেল না।
এমতাবস্থায় আসন্ন বর্ষার আগে বন্যা মোকাবিলায় সমস্ত নদীবাঁধগুলিকে শক্তপোক্ত করা, সব লকগেট ও স্লুইশ গেটগুলিকে সচল করা সহ ওই সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ করা এবং দ্রুত শীলাবতী নদীর নিম্নাংশ পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের বন্দোবস্ত ও পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে তদারকি কমিটিতে যুক্ত করে মাস্টার প্ল্যানের পূর্ণাঙ্গ রূপায়ণ করা যায় সেই দাবিতে আগামী ১৭ জুন আমরা ঘাটালের মহকুমা শাসক ও সেচ দপ্তরে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছি। এরপরও কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত পরশুদিন ঘাটালে জেলা শাসকের উপস্থিতিতে আগাম বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি সভা হয়েছে। যেখানে জেলাশাসক নানা পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে বিভিন্ন আধিকারিকদের।