সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৩ মে: ২০২৬- এর বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া বিধানসভা আসনটি ক্রমেই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রণক্ষেত্র হয়ে উঠছে। মর্যাদার এই আসনটি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া শাসক দল তৃণমূল। অন্যদিকে বিরোধী দল বিজেপি বাঁকুড়া কেন্দ্র ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই আসন নিজেদের অনূকূলে আনতে ময়দানে নেমে পড়লো তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্ব। সেই লক্ষ্য পূরণে এখন থেকেই দলের নেতা ও কর্মীদের জনসংযোগে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা নেতৃত্ব। জেলায় ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বাঁকুড়া কেন্দ্রের আলাদা একটা গুরুত্ব আছে। এই কেন্দ্রটি জেলা সদর হওয়ায় সবদিক থেকে তুলনামূলক অনেকবেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই জেলার রাজনৈতিক দলগুলি এই কেন্দ্র নিজেদের অনুকূলে আনার মরিয়া প্রচেষ্টা চালায়। সেই কারণে এই কেন্দ্র ধরে রাখতে রণকৌশল নির্বাচনের অনেক আগেই তৈরি করে ফেলেন।
সম্প্রতি বাঁকুড়া তৃণমূল ভবনে যুব তৃণমূল আয়োজিত সংবর্ধনা সভার বক্তব্য রাখতে গিয়ে আক্ষেপের সুরে বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার নবনির্বাচিত সভাপতি তারাশঙ্কর রায় বলেন, জেলার মাথা বাঁকুড়া সদর। এখানে রয়েছে সব দফতরের জেলা কার্যালয়। জেলার ব্লকগুলি থেকে এই সদর শহরে মানুষ আসেন। সেই সদর আসনটাই তৃণমূলের নেই। এটা তাদের কাছে লজ্জার। তাই সেই আসন ২০২৬- এর বিধানসভা নির্বাচনে ফেরানো তাদের অন্যতম লক্ষ্য। ভোটের আগে তাই নতুন করে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে কর্মীদের নতুন করে জনসংযোগে জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে এই বিধানসভা কেন্দ্রে বারবার বিরোধীদের কাছে হার মানতে হয়েছে শাসক দল তৃণমূলকে। গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে অভিনেত্রী সায়ান্তিকাকে প্রার্থী করে বাজিমাত করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী নীলাদ্রি শেখর দানার কাছে ১৪৬৮ ভোটে হেরে যান সায়ন্তিকা। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে তৃণমূলকে হারিয়ে জয়লাভ করে বাম- কংগ্রেস জোটের শম্পা দরিপা ১০২৯ ব্যবধানে। এই সময় তৃণমূলের প্রার্থী ছিল বাঁকুড়ার জনপ্রিয় তৃণমূল নেতা প্রয়াত কাশীনাথ মিশ্রের স্ত্রী মিনতি মিশ্র। তৃণমূলের আশা ছিল সহানুভূতির হাওয়ায় মিনতি মিশ্র জয়ী হবেন। কিন্তু সে অঙ্ক মেলেনি। গত ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে ২৯০৯০ ভোটের ব্যবধানে জয় হয়েছিল তৃণমূলের। সেই সময় দলের প্রার্থী ছিল কাশীনাথ মিশ্র। এটাই ছিল এই কেন্দ্রের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়। তার আগের বিধানসভা ২০০৬- এর নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী পার্থ দে জয়ী হয়েছিলেন।
এই প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, ২০০১ বিধানসভা নির্বাচনে পার্থবাবু ২৩১৩ ভোটে কাশীনাথবাবুর কাছে হেরে গিয়েছিলেন। জেলার রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহলের মতে এই কেন্দ্রের ভোটাররা সচেতন। তাই পছন্দের না হলে সেই প্রার্থীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এই কেন্দ্রের পূর্বাভাস মেলে না। তাই নীল, গেরুয়া ও লাল সব দলই সর্বশক্তি দিয়ে অনেক আগেই নেমে পড়েন লড়াই-এর ময়দানে। তবে বিজেপি এই কেন্দ্রটি এবারও তাদের পক্ষে রাখতে বদ্ধপরিকর। হাওয়া বিজেপির পক্ষেই রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া আসনটি তৃণমূলের কাছে বিজেপি হার মানলেও বাঁকুড়া সদর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি এগিয়ে ছিল।
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, এবারও তারাই জয়ী হবেন। তাঁর মতে তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা আপাদমস্তক চুরি ও দুর্নীতিতে ডুবে যাওয়ায় নেতৃত্বের গলায় এখন হতাশার সুর। এই কেন্দ্রের ভোটাররা সচেতন। তারা সবই দেখছেন। তাই তৃণমূল যাই করুক না কেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি আসনেই বিজেপি জয়লাভ করবে।