মিলন খামারিয়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম বর্ধমান, ২৩ নভেম্বর: ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’ আয়োজিত প্রশিক্ষণ বর্গের আজ দ্বিতীয় দিন। এদিন সারাদিন ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য ও আলোচনা চলে এবং রাতে কল্লোল ভট্টাচার্যের পরিচালনায় ও ‘এবং আমরা’-এর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘একটি ভালোবাসার গল্প’।
এদিন শুরুতেই অখিল ভারতীয় প্রশিক্ষণ প্রমুখ অরুণ শর্মা বলেন, “বিদেশিদের দ্বারা আমাদের দেশ বারবার আক্রান্ত হয়েছে। তারা আক্রমণ করে আমাদের শুধু যে সম্পদ নষ্ট করেছে তাই নয়; আমাদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, মানসিকতা ইত্যাদির উপরও আক্রমণ করেছে। সেই পরাজিত মানসিকতা আদতে আমাদের সভ্যতার ক্ষতি করেছে ও করছে। আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু আমাদের মানসিকতা আজও ভারতীয় হয়নি। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষকে আগে মানসিক ভাবে ভারতীয় করে গড়ে তোলা।
এরপর বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের প্রচার প্রমুখ বিপ্লব রায়। তিনি বলেন, “সঙ্ঘ এখন পাঁচটি বিষয় নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামাজিক সমরসতা অর্থাৎ সমাজের মানুষের মধ্যে বিভেদ মেটানো, কুটুম্ব প্রবোধন অর্থাৎ পরিবার রক্ষা ও নিজের সংস্কৃতি রক্ষা, পর্যাবরণ অর্থাৎ পশু-পাখিদের রক্ষা ক’রে সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখা, স্বাভিমান অর্থাৎ নিজের সংস্কৃতি ও পোশাক-পরিচ্ছদ রক্ষা করা এবং অনুশাসন অর্থাৎ নাগরিক কর্তব্যের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গঠন। যতদিন পর্যন্ত সমাজে সার্বিক সাম্যাবস্থা ও প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা না আসবে ততদিন এই পাঁচ বিষয় নিয়ে কাজ করে যাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। সংস্কার ভারতী তাদের কাজের মাধ্যমে উক্ত বিষয়গুলো সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিক, সঙ্ঘের পক্ষ থেকে আমরা এই অনুরোধ করছি।”
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের ‘সঙ্ঘ চালক’ সারদা প্রসাদ পাল বলেন, “শিল্পীদের মধ্যে প্রথমে রাষ্ট্র ভাব আনতে হবে। তাহলে তাদের কাজের মধ্যেও তা প্রতিফলিত হবে। বিদেশি ভাবনার শিল্পকেও দেশীও ভাবধারার সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের এই সনাতন সভ্যতা অত্যন্ত প্রাচীন। বারবার আক্রান্ত হয়েও তা টিকে আছে। আর তাই আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতিও বজায় আছে। যেখানে হিন্দুরা কমে গেছে সেখানে শিল্পীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিহাস বারবার সে সাক্ষী দিয়েছে।”
‘সংস্কার ভারতীর পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’-এর কার্যকরী সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন,” ‘স্ব’ ভাবের উপর আমাদের জোর দিতে হবে। সংগঠন, সদস্যতা, সংস্কার, সম্পর্ক, সম্মান প্রদান, সততা, সমালোচনা, স্বপ্ন, সময়ানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা, সম্মেলন, সাম্যতা, সমর্পণ, সভা – এই ১৪টি বিষয়ের উপর জোর দিলে তবেই সংস্কার ভারতীর সার্বিক উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি। শিল্পের সাধনার সাথে সাথে রাষ্ট্রের সাধনায় জোর দিতে হবে আমাদের। রাষ্ট্র শক্তিশালী থাকলে তবেই আমাদের শিল্পের উন্নতি হবে। হানাদারদের হাত থেকে আমাদের সবাইকে রক্ষা করতে হবে।”
সংস্কার ভারতীর অখিল ভারতীয় সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা রায় বলেন, “সারা দেশের সাথে তাল মিলিয়ে ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’ কাজ করে চলেছে। ভারতীয় সংস্কৃতিকে যারা শ্রদ্ধা করেন তাদের সাংগঠনিক ভাবে আমাদের যুক্ত করতে হবে। সাহিত্য, লোককলা, কলা ধরহর, দৃশ্যকলা, মঞ্চকলা – এই পাঁচ বিধায় ভাগ করে সংস্কার ভারতী কাজ করছে। সমাজের সর্বস্তরের শিল্পীদের আমাদের যুক্ত করতে হবে, তবেই সংগঠন মজবুত হবে।”
আজকের অনুষ্ঠানে তনুশ্রী মল্লিকের নির্দেশনায় সমবেত সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন রুমা মুখোপাধ্যায়। দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করেন অপর্ণা চক্রবর্তী এবং ছায়া খাঁড়া। একক নৃত্য পরিবেশেন করেন নরোত্তম সেনগুপ্ত।
গতকাল ও আজ প্রশিক্ষণ বর্গ সম্পর্কে ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’-এর সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, “সংস্কার ভারতী একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রতিবছরই সংগঠনের কার্যকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এবার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিশিষ্ট নট ও নাট্যকার গিরীশ ঘোষের সম্মানে নাট্যমেলার আয়োজন করা হয়েছে। আজ কল্লোল ভট্টাচার্য-এর ‘একটি ভালোবাসার গল্প’ নাটক পরিবেশিত হয়েছে। এছাড়া বীরাঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীবালা দেবীর জীবন আধারিত নাটক ‘কেনো চেয়ে আছ গো মা’ ভবিষ্যতে পরিবেশিত হবে রাজ্য ও দেশজুড়ে, গতকাল যার নামাঙ্কন প্রকাশ করা হয়েছে”।
আজকের বর্গে নাট্যাচার্য ভরত মুনির ছবি আঁকেন শীর্ষ আচার্য। অনুষ্ঠান শেষে ভারতীয় সংস্কৃতি ন্যাস কর্তৃক দু:স্থ নাট্যশিল্পীদের শীতবস্ত্র প্রদান করা হয়।