সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৩১ আগস্ট: গতকাল রাতে এক চলন্ত বাইকে বিস্ফোরণ হয়। এতে ওই বাইকের চালকের একটি পায়ের হাঁটুর নীচের অংশ উড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঝলসে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার লা-পাহাড়ি এলাকায়। স্থানীয়রা তাকে শালতোড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। মৃতের নাম বাবলু ওরফে জয়দেব মন্ডল (৪২)। বাড়ি শালতোড়ার ঝনকা গ্রামে।
এনিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শুক্রবার রাতেই তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোষ্ট করে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি শালতোড়ার পাথর খাদানে পাথর ফাটানোর জন্য অবৈধ পথে বাইকে করে ডিনামাইট বহন করছিলেন। তিনি আরও লেখেন, তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী বাঁকুড়ার সাংসদ হওয়ার পরেই শালতোড়া এলাকায় অবৈধ কারবার বেড়ে গেছে। বাইক চালকের মৃত্যু ও অবৈধ কারবার নিয়ে শনিবার শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি পথে নামেন। তিনি প্রশাসনের কাছে ৭২ ঘন্টার মধ্যে এলাকায় অবৈধ পাথর খাদান চিহ্নিত করে তা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। এদিন তিনি শালতোড়ায় বিশাল মিছিল নিয়ে খাদান এলকা পরিক্রমা করে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিস্ফোরণে বাইক চালকের মৃত্যুর কথা অস্বীকার করেছেন শালতোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি সন্তোষ মন্ডল। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তির বাইকের সামনের চাকা বাষ্ট হওয়াতেই সজোরে বাইক নিয়ে পড়ে যান। তখনই তেলের ট্যাঙ্কে আগুন ধরে যায়। পুলিশ এ নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
জানাগেছে, শালতোড়া এলাকায় প্রায় ২০০ পাথর ভাঙানোর ক্রাশার ও অসংখ্য খাদান রয়েছে। করোনার সময় থেকে প্রায় আড়াই বছর সেগুলি বন্ধ ছিল। এলাকাবাসীদের দাবি, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে শালতোড়া সহ বাঁকুড়ায় তৃণমূলের ভরাডুবির পর ক্রাশার ও পাথর খাদান খোলার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। এই অভিযোগ চন্দনা বাউরিরও। তিনি বলেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক ব্যানার্জি নাকি ক্রাশার ও পাথর খাদান খুলিয়েছেন। আমরা জানতে চাই কতগুলি পাথর খাদান বৈধ। সেখানে বিস্ফোরক দিয়ে পাথরের চাঙড় ফাটানোর অনুমোদন রয়েছে কি না। কয়েক বছর আগে গোট গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে রাখা ছিল এধরনের বিস্ফোরক। দোতলা বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে ও এক শিশু সহ বাড়ির মালিকের মৃত্যু হয়।
শুভেন্দু অধিকারীর করা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বলেন, কোথাও অবৈধ খাদান নেই। আগে কিছু বন দফতরের জমিতে ছিল। সেই জমি চিহ্নিত করে তারা দখল নিয়ে নিয়েছে। জেলা ভূমি দফতর শর্ত সাপেক্ষে কয়েকটি খাদানের অনুমোদন দিয়েছে। অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তিনি শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে বলেন, উনি নিজেকে সবজান্তা ভাবেন। কিন্তু বাঁকুড়ার ইতিহাস ভূগোল তার জানা নেই।