সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৭ এপ্রিল: অশান্ত মণিপুরে জঙ্গি হামলায় প্রাণ গেল সেনা জওয়ান বাঁকুড়ার পাঁচাল গ্ৰামের অরূপ সাইনির।নির্বাচন আবহে ভারতের উত্তর-পূর্বে মায়ানমার সীমান্তে পাহাড়ি রাজ্য মণিপুরে শুক্রবার রাতে অতর্কিত জঙ্গি হামলায় মারা গেলেন বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার পাঁচাল গ্রামের এই সেনা কর্মী। তিনি ভারতীয় সিআরপিএফ বাহিনীর ১২৮ নম্বর ব্যাটালিয়ানের হেড কনস্টেবল ছিলেন। জঙ্গিদের ওই হামলায় অরূপ সাইনির সঙ্গে ওই ব্যাটালিয়ানের আর এক সাব ইন্সপেক্টর এন সরকারও শহিদ হন। জঙ্গিদের ছোড়া শক্তিশালী বোমা এবং গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছেন এক ইন্সপেক্টর ও এক কনস্টেবল। ওই ঘটনার জন্য প্রাথমিক সন্দেহ মণিপুরের কুকি জঙ্গি গোষ্ঠীর দিকে।
ঘটনার বিবরণে জানাগেছে, লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গি হামলা রুখতে মণিপুরের নারায়ণসিনা এলাকায় সিআরপিএফের ১২৮ নম্বর ব্যাটালিয়ানের একটি অস্থায়ী সেনাছাউনি বসানো হয়। সূত্র মারফত জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ খাওয়া দাওয়ার পর ১২৮নং ব্যাটালিয়ানের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা সিআরপিএফ-এর জওয়ানরা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় তাঁবুতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। এর কিছু সময় পরেই ওই ছাউনি থেকে কিছুটা দূরে একটি পাহাড় থেকে জঙ্গিরা শক্তিশালী বোমা বর্ষণ করা শুরু করে। তার সঙ্গেই ছাউনি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে হেড কনস্টেবল অরূপ সাইনি সহ অন্যান্য জওয়ানরা জঙ্গিদের পালটা জবাব দেওয়া শুরু করেন। সেই সময় জঙ্গিদের ছোড়া একটি শক্তিশালী বোমায় অরূপ সাইনির একটি পা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। গুলি লাগে সাব ইন্সপেক্টর এন সরকারের বুকে। ভোররাত পর্যন্ত ওই গুলি ও বোমার লড়াই চলতে থাকে। শনিবার সকালে গ্রামের ছেলের শহিদ হওয়ার খবর সোনামুখীর পাঁচালে পৌঁছালে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারের শহিদ জওয়ান অরূপ সাইনির বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা রমাকান্ত সাইনি, স্ত্রী পূর্ণিমা সাইনি ছাড়া তাদের ৫ বছরের এক মেয়ে এবং দেড় বছরের একটি ছেলে। অরূপবাবুর ২ ভাই চাকরি সূত্রে ভিন রাজ্যে থাকেন। এদিন পাঁচালে গিয়ে দেখা যায় গোটা গ্রামজুড়ে থমথমে পরিবেশ। অরূপবাবুর বাড়ির সদস্যরা শোকে পাথর। তাঁরা কেউ কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না।
সাইনি পরিবারের এক প্রতিবেশী তথা উপ প্রধান সুব্রত মিশ্র বলেন, ‘অরূপ খুব ভালো ছেলে ছিল। দেড় মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিল। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন ও মণিপুরে কাজে যোগ দিতে যায়। বলেছিল লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে ওদের অন্য জায়গায় পোস্টিং হবে। তখন আবার একবার গ্রামের বাড়িতে আসবে। অরূপের মা প্রায় ৩০ বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে বাবা, স্ত্রী আর সন্তানরা রয়েছে। ভাইয়েরাও বাইরে থাকে। এখন কিভাবে ওঁদের চলবে সেটাই বুঝতে পারছি না’। কথা ছিল নির্বাচনের পর আবার বাড়িতে ফিরবে। কিন্তু নির্বাচন এখনো চলছে। তার মধ্যেই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল তবে কফিন বন্দি হয়ে। এদিন রাত ১১টা নাগাদ অরূপ সাইনির মরদেহ গ্রামে আসবে বলে পুলিশ সূত্রে জানাগেছে।