আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ১৭ আগস্ট: সুন্দরবনের মহিলাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মৎস্য চাষকে দীর্ঘদিন ধরেই উৎসাহ দিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় অন্তঃস্থলীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থা বা সিফ্রি। এবার আরও বৃহত্তর মাত্রায় সুন্দরবনের প্রায় তিন হাজার মহিলাকে এ কাজে যুক্ত করা হলো।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে নিজেদের বাড়িতে থাকা পুকুরেই কিভাবে মাছ চাষ করে গ্রামের এই মহিলারা স্বনির্ভর হবেন সে বিষয়ে তাঁদেরকে উৎসাহিত করলেন এই কেন্দ্রীয় সংস্থার অধিকর্তারা। শনিবার বাসন্তীর কুলতলি মিলনতীর্থ সোসাইটির সঙ্গে সহযোগিতায় সুন্দরবন এলাকার প্রায় তিন হাজার মহিলাকে নিয়ে সম্মেলন করা হয়। এই সম্মেলন মঞ্চ থেকেই এদিন নতুন করে তপশিলি জাতি ও উপজাতি ৫০০ মহিলার হাতে মাছের চারা ও খাবার তুলে দেওয়া হয়।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের উপমহানির্দেশক (মৎস্যবিজ্ঞান) জে কে জেনা, সিফ্রির নির্দেশক বসন্ত কুমার দাস, কুলতলি মিলনতীর্থ সোসাইটির অধিকর্তা লোকমান মোল্লা সহ বিশিষ্টরা।
প্রায় প্রতিবছর নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সুন্দরবণের মানুষজন বরাবর ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েন। চাষ একমাত্র জীবিকা এখানকার মানুষের। কিন্তু দিনের পর দিন নদী ভাঙ্গনের ফলে যেমন নোনা জল ঢুকে চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি নদীগর্ভেও বহু চাষের জমি চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবন এলাকার বহু পুরুষ মানুষই কাজের জন্য ভিনরাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন। মহিলারা বাড়িতে থাকলেও নদীতে মিন ধরা ছাড়া তাঁদের অন্য তেমন কোনো কাজ নেই। আর মিন ধরতে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অন্তঃস্থলীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র উদ্যোগ নিয়েছে সুন্দরবনের মহিলাদের মাছ চাষের মাধ্যমে স্বনির্ভর করার। এই এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে থাকা পুকুরে কিভাবে দেশি মাছ যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল এবং জিওল মাছের মধ্যে শিঙি, মাগুর, কই চাষ করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিগত দু’ তিন বছর ধরে সিফ্রি দফায় দফায় এই এলাকার বহু মহিলাকে মাছ চাষের মাধ্যমে স্বনির্ভর করতে সক্ষম হয়েছে। এবার আরও বৃহত্তর ভাবে সুন্দরবনের তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলাদের এই মাছ চাষে উদ্যোগী করা হচ্ছে। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মাছ চাষ, সেই মাছ বিক্রি করে ব্যাঙ্কে টাকা রাখা ও নিজেদের মূলধন বাড়িয়ে আরও কিভাবে চাষ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে প্রযুক্তিগত পরামর্শও দিচ্ছে সিফ্রি। এ বিষয়ে আর্থিক সহযোগিতার জন্য স্টেট ব্যাঙ্কের সাহায্যও মিলবে বলে জানানো হয়েছে এই মহিলা মৎস্য চাষিদের।
এদিন সুন্দরবনের বাসন্তী ও গোসাবা ব্লকের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৫০টি গ্রাম থেকে আগত নতুন ৫০০ মহিলার হাতে ১০ কেজি করে মাছ ও ১০০ কেজি করে মাছের খাবার তুলে দেওয়া হয়। জে কে জেনা বলেন, “সুন্দরবন এলাকার মহিলাদের সুবিধা হল এখানে প্রতিটি বাড়িতেই একটি করে পুকুর রয়েছে। আর সেই পুকুরকে কাজে লাগিয়েই মাছ চাষ করা সম্ভব সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে যেমন মহিলারা স্বনির্ভর হবেন, তেমনি ঐ পরিবারটিও আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন।”
বসন্ত কুমার দাস বলেন, “আমারা বেশ কিছু বছর ধরেই সুন্দরবনের গোসাবা, হিঙ্গলগঞ্জ, বাসন্তী, গঙ্গাসাগর সহ অন্তত দশ জায়গায় মহিলাদের স্বনির্ভর করতে এই উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী দিনে এই ধরনের উদ্যোগ আরও নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই দুটো হ্যাচারি তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে এই এলাকায়।”
লোকমান বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারি এই সংস্থাকে ধন্যবাদ যে তাঁরা সুন্দরবনের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা বুঝেছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আগামী দিনে এই ধরনের আরও প্রকল্প তাঁরা সুন্দরবনের মানুষের জন্য ভাববেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।”