আমাদের ভারত, ৩১ জানুয়ারি: তরুণ, গতিশীল এবং প্রযুক্তি-কুশল জনগোষ্ঠীর সঠিক ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে ভারত কাজের গতি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সক্ষম এক শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে পারে। ২০২৪-২৫ এর অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এ কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন শুক্রবার সংসদে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করেন।
ভারত সরকার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো এ খবর জানিয়ে বলেছে, “কৃত্রিম মেধা (এআই) এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে। এমন এক যুগ, যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির সিংহভাগই স্বংয়ক্রিয় পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যাবে। কিন্তু একইসঙ্গে এর ফলে শ্রম ক্ষেত্রে ব্যাপক ছাঁটাই হতে পারে। বিশেষত, মধ্য ও নিম্ন মজুরির শ্রমিকদের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে ২০২৪-২৫ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতে কৃত্রিম মেধার ঝুঁকি ও সম্ভাবনার কথায় অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু হলডেন-কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, শিল্প ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব সবসময়ই যন্ত্রণাদায়ক হয়। এতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ে, যাঁরা কর্মচ্যুত হলেন তাঁদের জীবিকার নিশ্চয়তা থাকে না এবং অর্থনৈতিক অসাম্য আরও ব্যাপক আকার নেয়।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ইতিহাসের থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বয়ংক্রিয়তার দিকে যাত্রার পথে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে, বিশেষত ভারতের মতো দেশে এই সতর্কতা আরও বেশি কাম্য। ভারতের অর্থনীতি পরিষেবা কেন্দ্রিক- এর একটা বড় অংশই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, যাঁরা নিম্নমূল্য সংযোজন সংক্রান্ত পরিষেবায় নিয়োজিত। স্বয়ংক্রিয়তার ফলে এই পেশাগুলি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। বিভিন্ন সংস্থা খরচ কমানোর জন্য শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকবে।
ভারতে কৃত্রিম মেধার জোয়ারকে সঠিকভাবে সামলাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, স্বয়ংক্রিয়তার নেতিবাচক প্রভাব যতদূর সম্ভব কমাতে সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এমন এক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে উদ্ভাবনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকাশ সুনিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য নতুন সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্র এবং শিক্ষা মহলের সম্মিলিত উদ্যোগে দ্রুত গতিতে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কৃত্রিম মেধার সঠিক ব্যবহারের জন্য এমন এক সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে যার মধ্যে সক্ষমতা প্রদানকারী, নিশ্চয়তা প্রদানকারী এবং কর্মসংস্থান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থাকবে। এগুলির মাধ্যমে আমাদের শ্রমশক্তিকে মধ্য ও উচ্চ দক্ষতার কাজে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাহলে কৃত্রিম মেধার জন্য তাদের কাজ হারাতে হবে না, বরং কৃত্রিম মেধা তাদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে এইসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সময়সাপেক্ষ। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও বৌদ্ধিক সম্পদ নিয়োজিত করতে হয়।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, কৃত্রিম মেধাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করার আগে এর সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করা দরকার। প্রথমত, এর বাস্তবযোগ্যতা এবং নির্ভরযোগ্যতা সুনিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কৃত্রিম মেধার বিকাশের জন্যও ব্যাপক পরিকাঠামো দরকার। এই পরিকাঠামো নির্মাণ সময় সাপেক্ষ। তৃতীয়ত, কৃত্রিম মেধার মডেলগুলিকে দক্ষ হতে হবে, এক্ষেত্রে কাজের মানের সঙ্গে কোনো আপোস চলবে না।
ভারতে কর্মসংস্থানের যে সমস্যা রয়েছে, তা কেবল সংখ্যাগত নয়, শ্রমশক্তির সার্বিক গুণগত মান বাড়ানোও এর মধ্যে পড়ে। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শ্রম এবং প্রযুক্তির মধ্যে যদি সঠিক ভারসাম্য আনা যায়, তাহলে এরা একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে, ঠিক যেমনটা বিংশ শতাব্দীতে দেখা গিয়েছিল। সেই সময় সুপরিকল্পিত সংযুক্তিকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার মাধ্যমে জনসংখ্যার নিরিখে কর্মসংস্থানের হারে বৃদ্ধি হয়েছিল।
একইভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ আবর্তিত হচ্ছে ‘উন্নত মেধাকে’কে কেন্দ্র করে, যেখানে মানুষ এবং যন্ত্র উভয়ের সক্ষমতাকেই সংযুক্ত করছে শ্রমশক্তি। এই দৃষ্টিভঙ্গী মানুষের সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে এবং কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াবে, যার জেরে লাভবান হবে সমগ্র সমাজ। তরুণ, গতিশীল এবং প্রযুক্তি-কুশল জনগোষ্ঠীর সঠিক ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে ভারত কাজের গতি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সক্ষম এক শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে পারে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নীতি নির্ধারকদের উদ্ভাবন ও তার সামাজিক খরচের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কৃত্রিম মেধার ওপর নির্ভরতা শ্রমের বাজারের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। কর্পোরেট ক্ষেত্রকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, কৃত্রিম মেধাকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। আজ ভারতে কৃত্রিম মেধা তার শৈশবে।
তাই ভারতের সামনে এইসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায়, নিজের ভিত্তি সুদৃঢ় করে তোলা এবং দেশজুড়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার মতো যথেষ্ট সময় রয়েছে। এজন্য সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্র এবং শিক্ষা মহলের সুসমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”