Bandana Sarkar, Khardaha, বয়স শুধু একটা সংখ্যা, প্রমাণ করলেন ৬৫-র বন্দনা সরকার

আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ১ জুন: কথায় আছে কিছু শেখার যেমন কোনো বয়স হয় না, তেমন পড়াশোনা করারও কোনো বয়স হয় না। সেটাই প্রমাণ করলেন খড়দহ আদর্শপল্লীর ষাটোর্ধ্ব বন্দনা সরকার। ৬৫ বছরে এমএ ফার্স্ট ক্লাস। বন্দনায় আপ্লুত খড়দহ।

চোখে ঠিকমতো দেখতে পান না। একটানা বসে থাকতে কষ্ট। স্নায়ুর সমস্যা আছে। এসব অসুখে ভুগছেন। তবে মনের জেদ কমেনি। উল্টে বয়সের সঙ্গে বেড়েছে একাগ্রতাও। গত আট বছর ধরে পড়াশোনায় মগ্ন ষাটোর্ধ্ব বন্দনা সরকার। জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে অর্জুনের মতো লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। সে লক্ষ্য ভেদ হয়েছে। স্নাতকোত্তর পরীক্ষা অবলীলায় উত্তীর্ণ। পেলেন ফার্স্ট ক্লাস। সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে চোখে জল। অদম্য জেদ ও অধ্যাবসায়ে ভর করে স্নাতকোত্তর পাশ করলেন তিনি। একসময়কার স্বনামধন্য সুরকার প্রবীর সরকারের স্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত নাট্যকার প্রবীর গুহর বোন এই বন্দনা দেবী। মাধ্যমিক পাশ করতে পারেননি বিয়ে হয়ে যাওয়ায়। তারপর পড়াশোনা করতে না পারায় ভুগতেন হীনমন্যতায়। সেখান থেকেই পড়াশোনার ইচ্ছে তৈরী হওয়া ও পড়াশোনার শুরু। যদিও পথ ছিল কঠিন। নিত্যদিন ভাবতেন চারিদিকে বিদ্বান মানুষের ভিড়। অথচ তিনি তেমন কিছুই করে উঠতে পারেননি। এই চিন্তা কুরে কুরে খেত। কিন্তু সংসার সামলাতে সামলাতে চিন্তাও ফিকে হয়ে যেত। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বহু বছর বিভিন্ন অফিস ও স্কুলে শাড়ি বিক্রি, ব্যাগে চানাচুর, বিস্কুট নিয়ে বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। এই করতে করতে মেয়েকে বড় করেছেন। প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিয়েও হয়েছে মেয়ের। তারপর ঝাড়া হাত-পা বন্দনাদেবীর। এরপর শুরু করলেন পড়াশোনা।

শ্যামবাজারের পার্ক ইনস্টিটিউটের রবীন্দ্রমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দনাদেবী ভর্তি হন। এরপর একে একে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ফেলেন বন্দনাদেবী। তারপর বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হন নেতাজি মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ে। পান ফার্স্ট ক্লাস। এরপর স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। এবার পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হয়েছে। এবারও ফার্স্ট ক্লাস। আর এই ভাবে ধীরে ধীরে মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক উত্তীর্ণ হয়ে এমএ ফাস্ট ক্লাস পেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি।এই পথে তার পাশে থেকে তাকে সবসময় উৎসাহ জুগিয়েছেন তার পরিবারের লোকেরাই। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে স্নাতকোত্তর স্তরের এই ফলাফল। এই ফলাফল প্রকাশের পরই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বন্দনা সরকার ও তার পরিবারের লোকজন।

বেথুন স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শুক্লা রায় পড়িয়েছেন তাঁকে। গাইড করেছিলেন। রেজাল্ট জানার পর গুরুকে জড়িয়ে কেঁদেই ফেললেন বৃদ্ধা। প্রমাণ করে ছাড়লেন লড়াইয়ের বয়স হয় না।

বন্দনা সরকার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, তার এই সাফল্যের জন্য তার স্বামী, তার পরিবার সব ক্ষেত্রে ভীষণ সাহায্য করেছে। আর তার জন্য তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। তার এই কীর্তি অনেক মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *