পার্থ খাঁড়া, মেদিনীপুর, ২০ সেপ্টেম্বর : প্লাবিত এলাকায় নতুন বিপদ। বিদ্যুত ছিন্ন এলাকাগুলিতে অন্ধকারেই কাটাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। মোমবাতি কিংবা অন্য আলো জ্বালানোর সুযোগই পাচ্ছেন না তাঁরা। জেলা জুড়ে ৬ হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে তুলে এনে রাখে হলেও বেশিরভাগ লোকজন গবাদিপশু ও জিনিসপত্র নিয়ে নিজেদের প্লাবিত এলাকাতেই থাকছেন৷ অন্ধকারে থাকা এমন প্লাবিত এলাকার ১৫ জনকে সাপে কামড়েছে। যাদের উদ্ধার করে চিকিত্সা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা৷ যার মধ্যে একজনের অবস্থা জটিল রয়েছে, তিনি আইসিইউ-তে রয়েছেন ঘাটালে।
কয়েকদিনের ভয়াবহ বন্যাতে সকলকেই উদ্ধার করা গিয়েছে এমন নয়। উদ্ধার কার্য অব্যাহত। অনেকেই নিজেদের ডুবে যাওয়া বাড়িতে থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বসে রয়েছেন। মাচা করে জলের ওপরে ছোট বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে কাটাচ্ছেন অনেকেই। নেই পানীয় জল ও পর্যাপ্ত খাবার। তাদের জন্য পানীয় জল খাবার ও সমস্ত ত্রাণের সামগ্রী নিয়ে হাজির হলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব সুরেন্দ্র গুপ্ত, জেলাশাসক খুরশেদ আলী কাদরী। জলে ডুবে থাকা পরিবারটির একেবারে মাচার তলাতে নৌকা নিয়ে পৌঁছে যেতে সমস্যা হয়নি জেলা শাসকের। ঘাটালের প্রত্যন্ত গ্রামের ডুবে থাকা এমন শতাধিক পরিবারের কাছে সারাদিন ঘুরে খাবার ও ত্রাণের সামগ্রী বিলি করলেন মুখ্য সচিব সুরেন্দ্র গুপ্ত ও জেলাশাসক খুরশেদ আলী কাদরিসহ আধিকারিকরা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। যাদের মধ্যে ৬ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। বন্যার জলে ডুবে যাওয়ার কারণে ৮০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিদ্যুৎ ছিন্ন করা হয়েছে। আড়াই লক্ষের বেশি কৃষকের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় এক লক্ষ হেক্টর শস্য ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধারকারী টিম সক্রিয় রয়েছে। যেখানে এনডিআরএফ এর টিম রয়েছে দুটি, এসডিআরএফ রয়েছে চারটি, মোট ১৫টি স্পিড বোট কাজ করছে বন্যাকবলিত এলাকাতে। এখনো পর্যন্ত ৮০ জন প্রসুতিকে উদ্ধার করা হয়েছে বন্যায় আটকে থাকা অবস্থা থেকে। যাদের মধ্যে ১০ জনের ইতিমধ্যেই সুস্থ প্রসব সম্ভব হয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকায় বেশিরভাগ স্থানেই অন্ধকার থাকার কারণে সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটছে প্রচুর ৷ জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক ডা সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “সাপে কামড়েছে ১৫ জনকে। তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা হচ্ছে।” তবে এদের মধ্যে ১ জন জটিল পরিস্থিতি নিয়ে ঘাটালে আইসিইউতে ভর্তি। বাকিরা সকলেই সুস্থ বলে জানিয়েছেন জেলা শাসক খুরশেদ আলী কাদেরী। প্রায় ৩০ হাজার ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। ১১ লক্ষ পানীয় জলের পাউচ বন্যা কবলিত এলায় এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই লক্ষ পানীয় জলের পাউচ প্রস্তুত হবে এমন মেশিন কাজে লাগানো হয়েছে।
প্রায় চার দিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও খড়গপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত। প্লাবিত মেদিনীপুর সদরের বিভিন্ন এলাকা। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ঘাটাল মহাকুমা। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, মানুষের কষ্ট খুব একটা কমেনি। পানীয় জল ও খাবারের জন্য কষ্ট শুরু হয়েছে। প্রচুর মানুষকে উদ্ধার করে রাখা হয়েছে তা শিবিরে। প্রত্যন্ত ডুবে থাকা এলাকাতে বৃহস্পতিবার দিনভর খাবার নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন জেলাশাসক ও মুখ্য সচিবের কয়েকটি ত্রাণ বোঝাই নৌকো। জেলাশাসক খুরশেদ আলী কাদেরী জানিয়েছেন, “জেলার পরিস্থিতি এখনো ভয়ংকর বলা যায়। তবে সমস্ত দিকে নজর রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি উদ্ধার ও মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য। আশা করছি কোনও মৃত্যুর ঘটনা বা খারাপ কিছু হতে দেব না”
তবে নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে জল কমার সাথে সাথেই। বিভিন্ন জায়গায় চাষের জমি যেগুলি কংসাবতী নদীর পাড়ে ছিল সেখানে ধস নামতে শুরু করেছে। যেমন মেদিনীপুর সদর ব্লকের ওপরডাঙ্গা, ভাটপাড়া সহ-সংলগ্ন এলাকাতে।