অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২০ জুন: সুরেন রাজমোহনের ছেলে, আর অসীমা পুত্রবধু। দেশভাগের পর ছেলে সুরেন স্ত্রী-সন্তানসহ ইন্ডিয়ায় চলে যায়। রাজমোহনের চার নাতি-নাতনী কানু, টেনু, রীণা, মীনা। ছেলে, পুত্রবধু, নাতি-নাতনীকে ছেড়ে রাজমোহন একাই চাকর-ঝি সহ দীর্ঘকাল জীবন কাটান পূর্বপাকিস্তান তথা বাংলাদেশে। বাড়ির গাছগাছালি, আবাদের ফসল, ঘরবাড়ি, চাকর-ঝি এসবের প্রেমে রাজমোহন দেশত্যাগ করতে পারেননি। ওকথা ভাবতেও পারেন না। কিন্তু একা, বড় নিঃস্ব তাঁর জীবন। তারপরেও মাতৃভূমি ছেড়ে তার পক্ষে ভেগে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি যেতে পারেননি ।
নরেন্দ্রনাথ মিত্র (১৯১৬-১৯৭৫) এভাবেই তাঁর ছোটগল্পর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন দেশভাগের একটা খণ্ডচিত্র। যার ভিত্তিতে রাজেন তরফদার তৈরি করেছেন তাঁর অসাধারণ সৃষ্টি ‘পালঙ্ক’। ছবিটি মুক্তি পায় ’৭৫-এ। ছবিতে আদালতচত্বরে এক পড়শির পুত্রের সঙ্গে ধলাকর্তার (রাজমোহন) একটি কথোপকথন
— ক্যামন আসো শ্রীপদ?
—আসি আর কই? এখন তো যাওয়নের পালা। থাকার তো আর উপায় নাই!
— মনপ্রাণ দিয়া সাও নাই।
— সাইসিলাম, পারলাম কই?
— প্রাণটারে পাকিস্তানে রাইখ্যা মনটারে আগেই হিন্দুস্থানে রাইখ্যা আইস। যাও গ্যালে বুঝবা!“
— যাই কন, স্বজাতির মধ্যে মরণও ভাল! বাবা আপনার কথা কইসিল।“
ছবিতে আদালতচত্বরেই মুহুরি হরিবিলাস আর ধলাকত্তার কথোপকথন
“যান গিয়া কলকাতায়, পোলার কাছে।“
— তুমিও তো ওই কথাই কও! দ্যাশ ফালাইয়া, ভিটেমাটি ফ্যালাইয়া আমি বিদেশ যাইব না।
চিত্রঋণ— রাজেন তরফদারের ‘পালঙ্ক’।
এভাবেই নিজের দেশ মনে করে পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে থাকার চেষ্টা করেছিলেন পূর্ববঙ্গের অসংখ্য হিন্দু। পারেননি। কেন, কীভাবে দ্রুত বদলে গেল পটভূমি, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। ১৯৪৭-এর ১৫ই মার্চ হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে বাঙালির জন্য হোমল্যান্ড এর প্রস্তাব দেওয়া হয়। সমর্থনে এগিয়ে এলেন বাংলার সমস্ত বিদগ্ধজন, ঐতিহাসিক রমেশ মজুমদার, সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, পন্ডিত রাম শংকর ত্রিপাঠি। শ্যামাপ্রসাদ বাংলা ভাগের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বললেন, পূর্বের অভিজ্ঞতা আমরা দেখেছি যে হিন্দুরা কোনোভাবেই একটা ইসলামিক পাকিস্তানে বেঁচে থাকতে পারবে না। ওই সম্মেলনে ঠিক হয়, বাংলা ভাগের প্রস্তাব এর সমর্থনে ব্যাপক জনমত তৈরি করা হবে। হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদের এই ঐতিহাসিক ভূমিকা স্বীকৃতি দিল বাংলার জনগণ। ২৩.০৩.১৯৪৭ এর অমৃতবাজার পত্রিকা জানালো, ৯৮.৩০% বাঙালি হিন্দু বাংলা ভাগের পক্ষে। মাত্র ০.৬% বাঙালি হিন্দু বাংলা ভাগের বিপক্ষে।
পূর্ণ হল দেশভাগের ৭৫ বছর। ২০শে জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। এই উপলক্ষে ‘মহামিছিল’-এর ডাক দিয়েছে ‘হিন্দু সংহতি’। তার প্রায় প্রাক্কালে হাওড়া-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ঘটল ভয়াবহ কান্ড। পশ্চিমবঙ্গের জন্মের বা দেশভাগের ৭৫ বছর বাদে উদ্ভুত পরিস্থিতি কীরকম? কী বলছেন বিশিষ্টরা?
“বাঙালি হিন্দুরা শিখবে না“: তথাগত রায়
(প্রাক্তন রাজ্যপাল)
১৯৪৬ সালের নোয়াখালীর ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতিত বাঙালি হিন্দুরা তাঁদের স্বজনদের হত্যা, ধর্ষণ, নৃশংসতা, গরুর মাংস খেতে বাধ্য করা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হতে দেখেছিলেন। নোয়াখালীতে মোহনদাস গান্ধীর সহচর ও দোভাষী নির্মল কুমার বোস তাঁর বই ‘ছেচল্লিশের ডায়েরি’-তে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পিএস-এ একজন হিন্দু বিধবা মিসেস বরমালা রায়ের অভিযোগ উদ্ধৃত করেছেন।
তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে কীভাবে তাঁদের বাড়ির সমস্ত পুরুষদের হয় শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল বা আগুনে জীবন্ত নিক্ষেপ করা হয়েছিল, মহিলারা মুসলিম পুরুষদের পূর্ণ দৃষ্টিতে নগ্ন হয়ে প্যারেড করেছিলেন। এরা ধনী হিন্দু জমিদার নয় বরং নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রামীণ লোক, দোকানদার, স্কুল শিক্ষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, জেলে ইত্যাদি ছিল।
ধনী মুসলিম জমির মালিক এবং দরিদ্র ভাগচাষিরা একসঙ্গে মিলে জমিদার থেকে নাপিত সকল হিন্দুকে হত্যা ও ধর্ষণ করত। তথাপি বামপন্থী আবর্জনা দ্বারা হিন্দু মনের কলুষতা এতটাই ছিল যে তারা এই ‘শ্রেণি সংগ্রামের’ তত্ব মুসলমানদের হত্যার যৌক্তিকতা তৈরি করেছিল। এমনকি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরেও এই জাতীয় বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেছিল।
আর আশ্চর্যের বিষয় হল, এখনও বাঙালি হিন্দুরা আছে যারা মুখে বলে ‘বিশ্বের শ্রমিকরা এক হও’! আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই যে এটি ঘটতে হবে, কিন্তু কেন রাশিয়া এবং ইউক্রেনের শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে যুদ্ধ বন্ধ করছে না? দুই সেটই কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে জীবনযাপন করেছে এবং এর মৃত্যু দেখেছে! প্রকৃতপক্ষে, এর সবই একধরণের মিষ্টি আবর্জনা যা ইতিহাস দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে।
কিন্তু বাঙালি হিন্দুরা শিখবে না। যতক্ষণ না অনেক দেরি হয়ে গেছে। আপনি যদি বাংলা পড়েন তাহলে আপনি আমার বই ‘বামপন্থা ভয়ঙ্করী- বাংলায় ও বিদেশে’ এবং ‘যা ছিল আমার দেশ’ পড়তে পারেন।”
(পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি)
***
”পশ্চিমবঙ্গ আবার ধর্মীয় ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে”: অরুণোদয় মন্ডল (‘পদ্মশ্রী’-প্রাপ্ত চিকিৎসক)
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলে মহম্মদ জিন্না পেলেন ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান আর মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে নেহেরু পেলেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারত। সেই সময় প্রায় ২৬% হিন্দু সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতো ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে। আর ভারতে প্রায় ৩৮% মুসলমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতো।
আজ বর্তমানে নানাবিধ কারণে পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কমতে কমতে ১.৬% এ নেমে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশে কমতে কমতে ৬-৮% এ নেমে এসেছে। অথচ ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাড়তে বাড়তে প্রায় ৪৮% হয়ে গেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানে লিয়াকৎ চুক্তির ব্যর্থতা ও ক্রমশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবলুপ্তির কারণে মনে হয় দেশ ভাগের প্রকৃত সুফল থেকে ভারত বঞ্চিত হলো। বর্তমানে যেভাবে ক্ষমতার বৃত্তে থাকবার প্রয়োজনে কিছু রাজনৈতিক দল প্রকৃত উন্নয়নের পথে না হেঁটে তোষণের রাজনীতি করছে তাতে মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ আবার ধর্মীয় ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংঘটিত ধর্মীয় সন্ত্রাস তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কারণ পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে মুসলিম ভোট প্রায় ৩৪% এবং আগামী দিনে এই শতাংশ ক্রমশ বর্ধমান। এই সংকট থেকে মুক্তি পাবার একটাই রাস্তা – সংখ্যালঘুদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা, অর্থনীতির উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় জাতীয় সংহতির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা, ভোট ব্যাংকের দুধেল গাই হিসেবে না ভেবে।
(বিশিষ্ট সমাজসেবী)
***
“বাঙালি হিন্দুকে আবার হয়ত ঘর বাড়ি ছেড়ে মহাপ্রস্থানের পথে নামতে হবে“: ডঃ অচিন্ত্য বিশ্বাস
(শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন উপাচার্য)
পশ্চিমবঙ্গে থাকা যাবে তো! এরকম লুটপাটই হয়েছিল তখন। কী আছে ভাগ্যে জানি না। অবস্থার ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট, বাঙালি হিন্দুকে আবার হয়ত ঘর বাড়ি ছেড়ে মহাপ্রস্থানের পথে নামতে হবে। কোথায় যাব আমরা? আর তো স্থান নেই! ড.শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মত দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব নেই!
শুধু ডোমজুড় নয় শুক্রবার নমাজের পর, দিল্লির জামা মসজিদ থেকে শুরু করে সারা দেশেই ‘নুপুর শর্মা (আর অন্য অভিযুক্ত)কে গ্রেপ্তারের দাবি’তে বড় জমায়েত হয়েছে। সর্বত্র পুলিশ শান্তি রক্ষার কাজ করেছে। ব্যতিক্রম, পশ্চিমবঙ্গ। এখানে হাতজোড় করে আবেদন করেছেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, অবরোধ তুলে নিন। তবে তিনি দুয়েকটা কথা বলেছেন যা বোধহয় ঠিক নয়। ‘দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করুন’ জাতীয় কথা মুখ্যমন্ত্রীর যোগ্য নয়।
আশ্রয় প্রশ্রয় বা তোষণ— যাই হোক, বিষয়টি মারাত্মক। এই সঙ্ঘবদ্ধ ধর্মান্ধদের যা ইচ্ছা করার স্বাধীনতা দিলে কী হতে পারে তার প্রমাণ বহু, তাই পরিণতি সহজেই অনুমেয়। বহুবার এরকম নিষ্ক্রিয় সহানুভূতিশীল শাসকের সামনেই যুথবদ্ধ সশস্ত্র ধর্মান্ধদের হাতে আমাদের মা বোনরা লাঞ্ছিত হয়েছে, মারা গেছে বহু হিন্দু বাঙালি। উৎসন্ন উদ্বাস্তু হতে হয়েছে।
হাওড়া জেলা সহ অনেক জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ অন্যায়। পুলিশ নিষ্ক্রিয়। হাত জোড় করে প্রশাসনিক মুখ্য অনুরোধ করেছেন মাত্র! সাধারণ মানুষের জীবনে এই হাঙ্গামার কোন যুক্তি নেই।
এরকম ঘটনা দেশ ভাগের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে!“
(ভারতীয় জাদুঘরের অছি পরিষদের সদস্য)
***
“ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির স্বপ্ন হিন্দুর হোমল্যান্ডে আজ হিন্দুই বিপন্ন“: ডঃ পঙ্কজ কুমার রায়
(শিক্ষাবিদ)
ভারতের আটটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে সংখ্যালঘুরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার মধ্যে ৩ টি জেলায় সংখ্যালঘুদের আধিপত্য বর্তমান। দেশ ভাগের সময় ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বাঙালি হিন্দুর হোমল্যান্ডের দাবীতে পশ্চিমবঙ্গ তৈরীর জন্য জনমত গঠন করেছিলেন। দেশভাগ পরবর্তী দাঙ্গা, ৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পুর্ব পাকিস্তান ও পরবর্তী বাংলাদেশে ধর্মের ভিত্তিতে নির্যাতন ও অনুপ্রবেশের কারণে পশ্চিমবাংলা ধর্মীয় ভাবে এক বিপদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। খাগরাগড়, বাদুরিয়া, বসিরহাট, ডোমকল, হরিদেবপুর, বারাসাত আজ সন্ত্রাসীদের আশ্রয় স্থলে পরিণত হয়েছে। যাদের স্বপ্ন বৃহত্তর ইসলামিক বাংলাদেশে গঠন। ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির স্বপ্ন হিন্দুর হোমল্যান্ডে আজ হিন্দুই বিপন্ন।
(যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ)
***
“এই ভূমিখন্ডকে জেহাদী হায়নাদের মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছিলাম“: দেবতনু ভট্টাচার্য (হিন্দু সংহতি’-র সভাপতি)
মুসলিম লিগের গুণ্ডাদের ছুরিচাকুর সামনে সবাই যখন আত্মসমর্পণ করে পাকিস্থানের দাবি মেনে নিয়েছে, তখনও আমরা হার মানিনি। আমরা লড়াই করেছিলাম এবং পাকিস্থানকে টুকরো করে পশ্চিমবঙ্গ বলে পরিচিত এই ভূমিখন্ডকে জেহাদী হায়নাদের মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের জন্ম ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির পরাজয় এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির বিজয়। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গোটা দেশের পরাজয়ের মধ্য থেকেও বিজয়শ্রী ছিনিয়ে আনার এই ঐতিহাসিক লড়াইয়ের ময়দানে বাঙ্গালি হিন্দুরা সেদিন দলমত নির্বিশেষে অবতীর্ণ হয়েছিল।
৫৮-২১ এর ব্যবধানে বিপুল ভোটে পাশ হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টির প্রস্তাব। পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন যে ৫৮ জন:- গোবিন্দলাল ব্যানার্জি, প্রমথ নাথ ব্যানার্জি, শিবনাথ ব্যানার্জি, সুশীল কুমার ব্যানার্জি, সুরেশ চন্দ্র ব্যানার্জি, মোহিনী মোহন বর্মন, হেমন্ত কুমার বসু, জ্যোতি বসু, চারু চন্দ্র ভাণ্ডারী, সতীশ চন্দ্র বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ, মিহির লাল চট্টোপাধ্যায়, অন্নদা প্রসাদ চৌধুরী, বীণা দাস, রাধা নাথ দাস, স্যার উদয় চাঁদ মহতাব, নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি, বিষাপতি মাঝি, ভূপতি মজুমদার।
ঈশ্বর চন্দ্র মাল, আশুতোষ মল্লিক, অন্নদা প্রসাদ মন্ডল, বঙ্কুবিহারী মণ্ডল, কৃষ্ণ প্রসাদ মণ্ডল, শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি, ধীরেন্দ্র নারায়ণ মুখার্জি, কালীপদ মুখার্জি, মুকুন্দ বিহারী মল্লিক, বাসন্তী লাল মুরারকা, খগেন্দ্র লাল দাশগুপ্ত, কানাই লাল দাস, কানাই লাল দে, হরেন্দ্র নাথ দলুই, সুকুমার দত্ত, নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি, অরবিন্দ গয়েশ, একে ঘোষ, বিমল কুমার ঘোষ, ডি গোমস। ডম্বর সিংহ গুরুং, ঈশ্বর দাস জালান, দেবী প্রসাদ খৈতান, চারু চন্দ্র মোহান্তি, অর্ধেন্দু শেখর নস্কর, যাদবেন্দ্র নাথ পাঁজা, এল আর পেন্টনি, আর ই প্লেটেল, আনন্দী লাল পোদ্দার, রজনী কান্ত প্রামাণিক, কমল কৃষ্ণ রায়, যোগেশ্বর রায়, শ্রীমতি ই এম রিকেটস, রাজেন্দ্র নাথ সরকার, দেবেন্দ্র নাথ সেন, বিমল চন্দ্র সিংহ, জিসিডি উইলকস।
১৯৪৭ এর ২০শে জুন জন্ম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের। তাই ২০শে জুন, পশ্চিমবঙ্গ দিবস, একটি ঐতিহাসিক দিন। শুধুমাত্র এই রাজ্যের জন্য নয়, এই দিনটি সমগ্র ভারতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইনি। তাই পাকিস্তানকে ভেঙে পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করেছিলাম। এই পশ্চিমবঙ্গ যেন আবার পাকিস্তানে পরিণত না হয় তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব এই প্রজন্মের।
***
“পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বাংলাদেশ হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা“: মোহিত রায়
(উদ্বাস্তু অধিকার আন্দোলনের নিষ্ঠাবান নেতা)
এই রাজ্যের প্রধান হিন্দুত্ববাদী বিরোধী দলও ক্রমশ এই তোষণের অঙ্গ হয়ে উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গের এই অস্তিত্বের সমস্যা তারা এড়িয়ে যান। পশ্চিমবঙ্গের গেরুয়াধারী বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনগুলিও একই রকম মেরুদণ্ডহীন। হাওড়ায় প্রধান জাতীয় সড়ক ১১ ঘন্টা অবরোধ একটি জাতীয় বিপর্যয়ের সমান। হাজার হাজার মানুষ বিপন্ন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ইসলামী মৌলবাদীরা এটা সহজেই করতে পারে, এর আগে সিএএ নিয়ে তিনদিন তারা পশ্চিমবঙ্গ অচল করেছে। এর কারণ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার এই মৌলবাদীদের সহযোগী, ফলে পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। অন্য যে কোনও গোষ্ঠী আধ ঘণ্টা পথ অবরোধ করলে পুলিশ সবাইকে গ্রেপ্তার করে, পেটানো, জল কামান, গুলি সব কিছু করে ফেলত।
তবে এবারের এই ঘটনা ঘটানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সমপর্যায়ের দোষী ভারত সরকার ও কেন্দ্রের শাসক দল। ইসলামী মৌলবাদীদের কাছে হাঁটু মুড়ে ক্ষমা চেয়ে তারা শরিয়তী বিধান মেনে নিয়েছে যে ইসলামের কোনও সমালোচনা করা যাবে না। ফলে এটা স্বাভাবিক যে ইসলামী মৌলবাদীরা জেনে গিয়েছে যে তাদের গুণ্ডামীই সব সরকার মেনে নেবে। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বিরোধী সেকুলার বুদ্ধিজীবী শিল্পী সাহিত্যিকরা এসবে বিচলিত হন না।“
***
“পশ্চিমবঙ্গ আবার ধর্মীয়ভাবে বিপন্ন“: নিরঞ্জন রায়
(জগদ্বন্ধু স্কুলের প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষক)
পশ্চিমবঙ্গ এখন ধর্মীয় ভাবে কিছুটা বিপন্ন। কয়েক দিনের মধ্যে হাওড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে হিংসাত্বক ঘটনা ও অবরোধ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক। এটা শুধুমাত্র প্রচার নয়, বাস্তব পরিস্থিতি।
১৯৪৭সালে বাংলা ভাগের মাধ্যমে বাঙালি হিন্দুদের জন্য পৃথক হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গঠিত হলেও অদ্যাবধি বাঙালি হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া-হুগলী ও উত্তর ২৪পরগনার বিভিন্ন স্থানে অতি নগণ্য কারণে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ওই সব এলাকায় বসবাসকারী হিন্দুরা আদৌ নিরাপদ নন। ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে সকল ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার আছে। কিন্ত তাই বলে যেখানে হিন্দুদের বসতি অপেক্ষাকৃত কম, তারা নির্যাতিত হবে? সব দিক পর্যালোচনা করলে মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ আবার ধর্মীয়ভাবে বিপন্ন। ইদানিং সামান্য ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে যে অশান্তি ও হিংসাত্বক কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে তা খুবই চিন্তার বিষয়! রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা প্রয়োজন।
এখানে মনে রাখতে হবে যে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে দুর্বলতা নয়। আমাদের চারপাশের রাষ্ট্রগুলো ধর্মনিরপেক্ষ নয়, অত্যন্ত মৌলবাদী। সুতরাং শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
***
‘উত্তরের সারাদিন’-এর প্রতিবেদনের পুনঃপ্রকাশ।
চিত্রঋণ— রাজেন তরফদারের ‘পালঙ্ক’।