মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু, সন্দেহ খুন করেছে ছেলে

আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২ মার্চ: সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ছেলে মাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে বলে অভিযোগ। এমনই অভিযোগ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। যদিও ছেলে খুনের কথা অস্বীকার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের মল্লারপুর থানার বড়তুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝোড়সনকপুর গ্রামে। মৃত মায়ের নাম চায়না মণ্ডল (৫৫)।

জানা গিয়েছে, চায়না মণ্ডলের দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার ছোটকাপসা গ্রামে। এদিকে মা-বাবার সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে ছেলের দীর্ঘ দিনের অশান্তি। মৃত্যুর আগে তাই বাবা সমস্ত সম্পত্তি ছেলেকে উইল করে দেন। গতবছরের ডিসেম্বর মাসে মারা যান বাবা। এনিয়ে শ্রাদ্ধের দিন ছেলে অরুণ মণ্ডল বাড়িতে অশান্তি করে বলে অভিযোগ। সে সময় ভগ্নিপতি গোরাচাঁদ দে শ্যালককে জানান, শ্বশুরমশাই সম্পত্তি উইল করেছেন কি না জানা নেই। তবে যদি করে থাকেন তাহলে সব ফেরত দেওয়া হবে। যাওয়ার আগে তিনি শাশুড়িকে ভালোভাবে দেখার জন্য আবেদন জানান। এরপরেই রবিবার গভীর রাতে চায়নাদেবীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ায় ছেলের যোগসূত্র নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। যদিও ছেলের দাবি, কে খুন করেছে বলতে পারব না। রবিবার রাতে আমি বাড়িতে ঢোকার দরজা খুলে রেখে ঢুকে যাই। কারণ মা সেই সময় বাড়ির বাইরে ছিল। তারপর মা কখন ঢুকেছে জানি না। তাছাড়া মা নিচের বারান্দায় শুয়ে থাকে। আমি খেয়ে উপর উঠে যাই। রাত ১২টা নাগাদ বাথরুম যাওয়ার জন্য উঠে দেখি সিঁড়ির দরজায় শিকলে তালা। অনেক ডাকাডাকি করে কারও সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীকে ফোনে ডাকা হয়। তারা বাড়িতে ঢুকে শিকল খুলে দেয়।

অরুণ দে নামে এক প্রতিবেশী বলেন, “আমি যখন ঘরে ঢুকি দরজা খোলা ছিল। মাসিমা উবুর হয়ে পড়ে ছিলেন। মাথার চুল ছিল উষ্কখুষ্ক। শিকল খুলে দিলে অরুণ মণ্ডল নেমে আসেন”। মৃতার বউমা ঝর্ণা মণ্ডল বলেন, “সাত বছর ধরে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে আমাদের বিবাদ। বিয়ের পর আমরা ঘরের ভিতর কি কথা বলছি তা মা কান পেতে শুনতেন। একবার দেখে ফেলেছিল স্বামী। তারপর থেকেই বিবাদ শুরু হয়। বছর দুয়েক আগে ফের সম্পর্ক ঠিকঠাক হয়। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি সমস্ত সম্পত্তি ননদের নামে লিখে দেওয়ায় সম্পর্কের অবনতি হয়। তবে আমি দিন চারেক থেকে বাপের বাড়িতে ছিলাম। রাতে খবর পেয়ে ছুটে আসি”। তবে ঝর্ণার দাবি, তার স্বামী শাশুড়িকে খুন করেনি। কারণ শ্বশুর মারা যাওয়ার আগে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন ননদের নামে। ফলে শাশুড়ির নামে কোনও সম্পত্তি ছিল না। তাহলে স্বামী কেন মারতে যাবে?

সাধন মণ্ডল বলেন, “ছেলে পরিকল্পিত ভাবে আমার শ্যালিকাকে খুন করিয়েছে। কারণ আমার ভাইরাভাই কিংবা শ্যালিকার সঙ্গে কারও কোন বিবাদ ছিল না। ছেলেই শ্বশুরবাড়ির যোগসাজশে খুন করিয়েছে। সম্পত্তির জন্যই এই খুন করা হয়েছে।

মৃতার মেয়ে রীতা দের দাবি, তার মাকে ক্ষীণ করা হয়েছে। তবে কারা খুন করেছে তা জানে না। তিনি পুলিশকে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন। যদিও পুলিশ মৃতার ছেলেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে। তবে তার গতিবিধির উপর নজর রাখছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *