আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ২৪ ফেব্রুয়ারি: সরকারি দলের সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান মানবাধিকারের আন্দোলনে পঞ্চম কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকাসহ নানা স্থানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উদ্যোগে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানী ঢাকার শাহবাগ চত্বরে আয়োজিত হয় মশাল মিছিল। সমাবেশে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত সরকারের অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অন্যথায় আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, মার্চ থেকে জুলাই’র মাঝামাঝি পর্যন্ত আটটি বিভাগীয় সদরে প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অ্যাডভোকেট দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই আর স্বাধীন বাংলাদেশে বঞ্চনা, বৈষম্য, নিগৃহণ, নিপীড়নের শিকার হতে চাই না। আমরা অপেক্ষা করবো প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় উদ্যোগের জন্যে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ও প্রাক্তন সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। বক্তব্য রাখেন অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ডঃ নিম চন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, মিলন কান্তি দত্ত, রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, এ্যাড. কি শোর রঞ্জন মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী, পদ্মাবতী দেবী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুমনা গুপ্তা, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপাপ্ত সভাপতি অতুল চন্দ্র মন্ডল, ঢাকা মহানগর ক্ষিদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতি লাল রায়, ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুদীপ্ত সরকার সূর্য, সাধারণ সম্পাদক শিপন বাড়াইক, আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. সুনীল রঞ্জন বিশ্বাস, ঢাকা বার শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুশান্ত বসু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড, প্রবীর হালদার, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সভাপতি প্রভাষ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রধর্ম এ দেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে। এহেন রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হবার জন্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী আমরা কেউই মুক্তিযুদ্ধ করিনি, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হইনি। পবিত্র ধর্মের অপব্যবহারের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তান ও বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশেও বছরের পর বছর ধরে একটানা বঞ্চনা, বৈষম্য, নিগ্রহন, নিপীড়নের শিকার হয়ে এরই মধ্যে সংখ্যালঘুরা অনেকেই দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
আজ অস্বীকারের উপায় নেই, রাষ্ট্র, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা এবং সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছে। ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ, কিশোর- কিশোরী আজ সার্বিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ও বিপর্যন্ত। নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আসার সাথে সাথে তাদের ওপর অব্যাহত নানামুখী হামলা আরও জোরদার হতে পারে বলে আশা ব্যক্ত করছি। ঐক্য পরিষদ তার জন্মলগ্ন থেকে মানবাধিকার আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ এর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্যে এ Proclamation আমাদের কাছে নিছক একটি দলিল নয়, এটি ছিল মুক্তিকামী মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের অঙ্গীকার।
২০১৫ সালের ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমাবেশ থেকে উত্থাপিত দাবির ভিত্তিতে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দশ মাস বাকি। অথচ সরকারি দলের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের সংখ্যালঘু- আদিবাসী স্বার্থবান্ধব প্ৰতিশ্ৰুতিসমূহ বাস্তবায়নে আজও কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। যা এদেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের জন্যে খুবই হতাশাব্যঞ্জক।
এহেন হতাশা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এ ব্যাপারে সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে বিগত মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ধারবাহিকভাবে অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করে এসেছে। যার সর্বশেষ ছিল ৬ ও ৭ জানুয়ারি, ২০২৩-র রোড মার্চ।
ইতোমধ্যে চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনার অংশ হিসেবে সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোববার সন্ধ্যে ৭টায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি’র সাথে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং বলা হয় আগামী নির্বাচনের পূর্বে প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে, সংখ্যালঘুরা অধিকতর হতাশ হয়ে পড়তে পারে, যা আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে তাদের উপস্থিতি ও ভোটদানে নিরুৎসাহিত করবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অনতিবিলম্বে নির্বাচনী অঙ্গীকার সাত দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ও দলগতভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে যথাসময়ে অবহিত করা হবে। তিনি এ মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে, এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। আজকের এ মশাল মিছিল ধারাবাহিক আন্দোলনেরই অংশ।