আমাদের ভারত, ১২ ডিসেম্বর: এক দেশ এক ভোট নীতি কার্যকর করতে বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে শোনা গেছে, শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল সংসদে পেশ করা হতে পারে। সেই আবহেই বৃহস্পতিবার এই নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়েছে কেন্দ্র সরকার। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই নীতিতে সবুজ সংকেত দিয়েছে।
সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্র বলে খবর। এক দেশ এক ভোট বিল চালু করার জন্য বুধবার জোরদার সাওয়াল করেছেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। বারবার নির্বাচন হওয়ার কারণে দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এক দেশ এক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করার বিষয় বিজেপি অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে ওই বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছিল। এই নীতি কার্যকর হলে সারা দেশে একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হবে। এক দেশ এক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে মোদী সরকারের যুক্তি, এই ব্যবস্থা চালু হলে ভোট প্রক্রিয়ার জন্য যে বড় অঙ্কের খরচ হয় তা কমে যাবে। ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির জন্য বারবার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে থাকবে না। তার সঙ্গে সরকারি কর্মীদের ওপর থেকে ভোটার তালিকা তৈরি ও ভোট সংক্রান্ত নানা কাজকর্মের চাপ কমবে।
এই নিয়ম কার্যকর করতে অনেক দিন ধরেই একটু একটু করে পদক্ষেপ শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার। এক দেশ এক নির্বাচন ব্যবস্থা এই দেশে চালু হলে তা কতটা বাস্তবসম্মত হবে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তার নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গত মার্চ মাসে কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে একই সঙ্গে একাধিক দফায় লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ও পৌরসভা ভোটের মতো আঞ্চলিক নির্বাচনগুলিকেও একই সময় করানোর কথা বলা হয়েছে।
যদিও একসঙ্গে সব নির্বাচন করার ব্যবস্থা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে এসেছে বিরোধী দলগুলি। তাদের যুক্তি, এই নীতি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী। এক দেশ এক নির্বাচন নীতির মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার ঘুরপথে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মত ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতেই শীতকালীন অধিবেশনে সম্ভবত পেশ হতে চলেছে এক দেশ এক নির্বাচনী বিল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিলটি অনুমোদন পেতেই সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিলটিকে অসংবিধানিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলে ব্যাখ্যা করে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন তিনি। বিরোধী নেতৃত্বের এবং বিশেষজ্ঞরা এই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মমতার অভিযোগ, কেন্দ্র তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলের সাংসদরা সংসদে এই বিলের বিরোধিতা করবে।
এদিকে বিলটি পাস করানোর জন্য আগে থেকেই বেশ কিছু পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। বিলটি নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চেয়েছে কেন্দ্র সরকার। সেক্ষেত্রে এক দেশ এক নির্বাচন বিলটি খতিয়ে দেখতে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর কথাও তারা ভাবছে। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমত তৈরির চেষ্টাও করতে পারে মোদী সরকার বলে মনে করা হচ্ছে।