সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৩ মে: আকস্মিক দুর্ঘটনায় দুই শ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দেয় মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। মৃত্যুর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নাকি শ্রমিক সুরক্ষায় গাফিলতি ফের এই প্রশ্ন উঠলো।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রবল বেগে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা ঝোড়ো হাওয়া ও মূহুর্মূহুঃ বজ্রপাত শুরু হয়। সেই সময় কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক একটি টিনের শেডের তলায় আশ্রয় নেয়। কালবৈশাখীর দাপটে এক ঠিকা সংস্থা দ্বারা নির্ণীয়মান চিমনির উপরে থাকা লোহার প্লেট দিয়ে তৈরি মাচা উড়ে এসে পড়ে টিনের শেডের উপর। সঙ্গে সঙ্গে তা হুড়মুড়িয়ে শ্রমিকদের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ে। তাতে চাপা পড়ে যান ৩ জন শ্রমিক। আশপাশে থাকা শ্রমিকরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় প্রথমে কিছু বুঝতে বা চাপা পড়া শ্রমিকদের চিৎকার শুনতে পাননি বলে জানান। কিছুটা দূরে থাকা আরেকটি শেডে আশ্রয় নেওয়া কর্মী শান্তিময় দাস ও উজ্জ্বল ঢাং- এর বক্তব্য, কিছুক্ষণের মধ্যে হাওয়ার দাপট কমতেই চিৎকার শুনতে পেয়ে ছুটে যান। তারা টিন সরিয়ে দেখেন ৩ জন শ্রমিক গুরুতর ভাবে জখম হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে এমটিপিএস হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে জখম ৩ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা ২ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জখম শ্রমিককে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম প্রেমশঙ্কর (৩১) ও কানওয়ার পাল (১৯)। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বেরিলি জেলায়। জানা গেছে, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো নামে এক ঠিকা সংস্থা ডিভিসির দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এফজিডি প্রকল্পের বরাত পায়। সংস্থার আধিকারিক উজ্জ্বল মজুমদার জানান, গত ৪ বছর ধরে আমরা এই কাজ করছি। এমটিপিএস-এর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আজ পর্যন্ত একটিও দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ এভাবে মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনবে তা কল্পনাও করা যায় না। নিয়মানুযায়ী মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং জখম ব্যক্তির সমস্ত চিকিৎসা ভার বহন করা হবে। কিন্তু এরপরেও শ্রমিক বিক্ষোভ কমেনি।
এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঠিকা শ্রমিকদের একাংশ। এখানে নেতৃত্ব দেন বিজেপি সমর্থিত শ্রমিক নেতা পলাশ মাজি। তাঁর দাবি, মৃত ও জখম শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, পাশাপাশি শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। তারা এদিন কাজে যোগ দেননি বলে জানান পলাশ মাজি।
এদিকে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি এই দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। কাল দুর্ঘটনার সময় ওরা কোথায় ছিলেন? কোথায় ছিলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সময়? রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মৃতদের পরিবারকে ১৫ লক্ষ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং
সৎকার করার জন্য এদিনই ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি ডিভিসি কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় ঠিকা সংস্থা মেনে নিয়েছে।