আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ২৩ এপ্রিল। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রক্তদান শিবিরে তৃণমূল বিধায়ক। শুধু উপস্থিত থাকাই নয় তিনি ভারত মাতার পায়ে পুষ্পার্ঘ্য দেন এবং ভারত মাতার নামে জয়ধ্বনি করেন। রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনায় তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে।
গত ২০ এপ্রিল রবিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একটি রক্তদান শিবির ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করেছিল। শ্যামনগরের কাউগাছিতে এই শিবিরে ৩৭ জন রক্তদান করেন এবং এলাকার বহু প্রান্তিক মানুষ চিকিৎসা পরিসেবা গ্রহণ করেন। এই রক্তদান শিবিরেই উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ওই শিবিরে অতিথি হিসেবে ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং ও বিজেপি বিধায়ক পবন সিংকেও আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। কোনও বিশেষ কারণবশত তাঁরা উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু দুপুর দেড়টার পর জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম ঐ অনুষ্ঠানে পৌঁছে যান। এলাকায় অনুষ্ঠান করতে তৃণমূলের চাপের কথা মাথায় রেখে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকর্তারা সোমনাথ শ্যামকে আগেভাগেই আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি যে হঠাৎ এই অনুষ্ঠানে চলে আসবেন তা কল্পনাও করতে পারেননি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকর্তারা।
সোমনাথ শ্যাম রক্তদান শিবিরে পৌঁছে প্রদীপ জ্বালিয়ে ভারত মাতার চরণে পুষ্প অর্পণ করেন ও সাথে ওঠে ভারত মাতার জয়ধ্বনি। তারপর শিবির পরিদর্শন করে ভারত মায়ের জয়ধ্বনি দিয়েই শুভেচ্ছা জানান পরিষদের কার্যকর্তাদের। সোমনাথবাবুকে নামাবলী উত্তরীয়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মাসিক পত্রিকা বিশ্ব হিন্দু বার্তা এবং গীতা দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয়। এই ঘটনায় কার্যত খুশির হাওয়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকর্তাদের মধ্যে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্যারাকপুর জেলার সম্পাদক পিনাকী চ্যাটার্জী বলেছেন, ‘হিন্দুত্বের সেবার এই কার্যক্রমে একজন হিন্দু ব্যক্তি হিসেবে এলাকার বিধায়ক উপস্থিত হওয়াতে আমরা খুশি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সংগঠনের নিয়ম অনুসারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকর্তারা কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে সরাসরি যেতে পারেন না, কিন্তু দলমত নির্বিশেষে যে কোনও রাজনৈতিক দলের হিন্দু ব্যক্তিরা সসম্মানে সেই অনুষ্ঠানে আসতেই পারেন।’ তাই রাজনৈতিক বিচারধারা আলাদা হলেও পিনাকীবাবু এটিকে হিন্দুত্বের জয় হিসেবেই দেখছেন।
এই নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে চলছে বিস্তর বিতর্ক। বিভিন্ন রাজনৈতিক মানুষ পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মত পোষণ করছেন। পাশাপাশি দলের মধ্যেও চলছে বিতর্ক। বিশেষ করে তৃণমূলের একপক্ষের বক্তব্য, আমন্ত্রণ জানালেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত হয়নি। অন্যদিকে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বেরও একাংশ অখুশি। কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বক্তব্য, ব্যক্তি রাজনীতি যাই থাকুক না কেন হিন্দুত্বের পালে যে সত্যি হাওয়া লেগেছে এই ঘটনা যেন তারই এক নিদর্শন।