আমাদের ভারত, ৩০ জুন: বাংলার মাটিতে একের পর এক ঘটনায় তালিবানি শাসনের ছবি দেখা যাচ্ছে বললে হয়তো ভুল বলা হবে না। রবিবার দুপুরে ভাইরাল হওয়া গণপিটুনির ভিডিও দেখে এমনটাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপি নেতা অমিত মালব্য থেকে শুরু করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ বিরোধীরা।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অপরাধে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে এক তরুণ- তরুণীকে। কঞ্চি দিয়ে উন্মত্ত ভাবে মারা হচ্ছে তাদের। অভিযোগ, যে মারছে সে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা। আর ভিড় করে দাঁড়িয়ে সবাই দেখছে সেই মারধর। চিৎকার করে গড়াগড়ি খাচ্ছেন ওই তরুণী। রাস্তায় পাশেই পড়ে এক যুবক। তাকেও মারা হয়েছে।
যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখেনি আমাদের ভারত। জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ঐ তরুণ তরুণী চোপড়ার লক্ষ্মীপুর গ্রামের দীঘল গাঁও এলাকার বাসিন্দা। ভিডিওতে দেখা যাওয়া তরুণী একজন বিবাহিত গৃহবধূ। ভিডিওতে যে যুবককে মার খেতে দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে মেয়েটির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। অভিযোগ, এ নিয়ে গ্রামে জানাজানি হতে ডাকা হয় একটি সালিশি সভা। সে সভা ডাকার ভূমিকায় ছিল জেসিবি। হ্যাঁ জেসিবি, আর কেউ নয় এলাকার এক প্রভাবশালী নেতা। যার আসল নাম তাজেমূল। জানাগেছে, তিনি বিধায়ক হামিদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ। এই নেতার আতঙ্কে থাকে গোটা এলাকা। তাকেই এই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে মারধর করতে।
অভিযোগ উঠেছে, জেসিবি নামের ওই নেতাই সেই সালিশি সভার নাম দেয় ইনসাফ সভা। সেই সভাতেই ঘটে এই ভয়ানক তালিবানি শাসন। তরুণ- তরুণীকে মাটিতে ফেলে এক গোছা কঞ্চি দিয়ে রীতিমত মারতে থাকে সে। দেখা যায় তরুণীকে রাস্তায় ফেলে তার পেছনে শরীরের বিভিন্ন অংশে সপাং সপাং করে কঞ্চি চালানো হচ্ছে। তরুণি চিৎকার করে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পাশেই পড়ে এক যুবক তাকেও মারা হচ্ছে একইভাবে। এক মহিলাকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় ছেলে, মেয়ে দুটিকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তাকে অগ্রাহ্য করেই চলতে থাকে মারের পর মার। ভিডিওটি পোস্ট করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, লজ্জাজনক ঘটনা! জেসিবি নামে পরিচিত একটি স্থানীয় গুন্ডা দ্বারা বিচার এবং শাস্তি হচ্ছে। এটা বুলডোজারের বিচার। মমতা সরকারের শাসনেই এই নিয়মটি গড়ে উঠেছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য লেখেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে বাংলায় ভয়ানক অবস্থা। প্রত্যেক গ্রামে সন্দেশখালি রয়েছে।
সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম লেখেন, সালিশি সভার নাম করে অপরাধের বিচার করে শাস্তি দিচ্ছে তৃণমূলের পোষা গুন্ডা। তার ডাকনাম জেসিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এভাবে বিচার ব্যবস্থা গুলিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার। তবে এই নিয়ে এলাকাবাসীরা ভয়ে মুখ খুলতে চায়নি। পুলিশের সামনেও কেউ বয়ান দিতে রাজি নয়। শোনা গেছে, মোবাইলে যিনি ভিডিও তুলেছেন তিনিও ঘটনার পর থেকে পলাতক। মারধর খাওয়া তরুণ- তরুণীর কোনো চিকিৎসা করা হয়নি বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে স্বতপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অত্যাচারীদের গ্রেফতারের জন্য এলাকায় অভিযান চলছে। জানা গেছে, জেসিপির বিরুদ্ধে একাধিক খুনের মামলা রয়েছে।
কোচবিহারে এক বিজেপি নেত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগে উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি, তার মধ্যেই আবার সামনে এলো চোপড়ার ভয়ানক এই গণপিটুনির ঘটনা।